আজ: বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে গেল গাজার একমাত্র ক্যান্সার হাসপাতাল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি ক্যান্সার হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এটি গাজার একমাত্র ক্যান্সার হাসপাতাল ছিল এবং ইসরায়েলের টানা অবরোধের কারণে জ্বালানি সংকটে বুধবার (১ নভেম্বর) সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

টানা প্রায় একমাস ধরে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল এবং এই কারণে ভূখণ্ডটিতে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা হুমকির মুখে পড়ে গেছে। বুধবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের মধ্যে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে গাজা উপত্যকায় ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রদানকারী একমাত্র হাসপাতালটির পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের ফলে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে এবং খাদ্য, পানি এবং বিদ্যুতের সরবরাহও ব্যাপকভাবে সীমিত করা হয়েছে। এর ফলে গাজার হাসপাতালগুলো এখন ইসরায়েলি হামলায় নিহত ও আহতদের ভিড়ে পরিপূর্ণ এবং জ্বালানিসহ নানা সংকট চিকিৎসা কর্মীদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে।

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক সুভি সুকেক বলেছেন, এই হাসপাতালটি আর কাজ করছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বকে বলব, হাসপাতালকে পরিষেবার বাইরে রেখে ক্যান্সার রোগীদের নির্দিষ্টভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবেন না।’

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, টানা প্রায় একমাস ধরে হওয়া ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণে ৮ হাজার ৭৯৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু। এছাড়া নিহতদের মধ্যে ২ হাজারের বেশি নারী এবং প্রায় পাঁচশো বয়স্ক মানুষও রয়েছেন।

তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো গাজা ভূখণ্ডের ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১৬টিই এখন পরিষেবার বাইরে চলে গেল। এছাড়া গাজার ৭২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের মধ্যে ৫০টিরও বেশি ক্লিনিকও বন্ধ হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসাধীন ৭০ জন ক্যান্সার রোগীর জীবন গুরুতরভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘হাসপাতালগুলো চালু না থাকলে গাজার হাজার হাজার রোগী জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে যাবেন। ক্যান্সার রোগীদের স্বাস্থ্য ইতোমধ্যেই নাজুক। যদি তারা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পায়, তাহলে এটা তাদের জন্য মৃত্যুদণ্ড।’

তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক সুভি সুকেক এর আগে আল জাজিরাকে সতর্ক করেছিলেন, হাসপাতালের জ্বালানি শেষ হয়ে আসছে এবং পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে তা রোগীদের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলবে।

এদিকে জ্বালানির ঘাটতি গাজায় মানবিক কার্যক্রমকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ) মুখপাত্র জুলিয়েট তোমা আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘ইউএনআরডব্লিউএ-এর জ্বালানি প্রয়োজন। গত সাড়ে তিন সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় কোনও জ্বালানি আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ অভিভূত। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষ রয়েছে। এটি আমাদের ধারণার চেয়ে চারগুণ বেশি। বর্তমানে জ্বালানি পুরোপুরি জীবন রক্ষাকারী পণ্য।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.