‘প্রতিবেশী দেশের চেয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অনেক সম্ভাবনাময়’
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়।
জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে ‘জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল ফ্রাঙ্কফুর্ট’ হোটেলে বুধবার (০১ নভেম্বর) ‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশ মব: নেটওয়ার্কিং লাঞ্চ’ শীর্ষক অনুষ্ঠিত রোড শোতে তিনি এই কথা বলেন।
বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএসইসি ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-জার্মানি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩’ শীর্ষক একটি সামিট অনুষ্ঠিত হয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেনন, পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধান উৎস করার জন্য ক্রমাগত উন্নয়নের নিমিত্ত বিএসইসি কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা অনেক সুবিধা। তাই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অংশীদার হওয়ার জন্য জার্মানির ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাচ্ছি।
বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের নিকট বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ এর আয়োজন করা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে সামিট আয়োজন করা হয়, যার প্রধান আলোচ্যসূচি ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয়, সহজতর এবং লাভজনক দেশ হিসেবে জার্মানির বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের নিকট তুলে ধরা।
জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় সামিট আয়োজনটি শুরু হয়। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)’র চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্যের পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর অডিও-ভিজুয়াল প্রদর্শিত হয়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ইকোনোমি: দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার’ শীর্ষক উপস্থাপনা প্রদান করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে স্বাধীনতা লাভ এবং তার দেখানো সোনার বাংলার স্বপ্নের অনুসরণে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার মাত্র পঞ্চাশ বছরের পেরিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হওয়ার অভাবনীয় সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
বাংলাদেশ ও জার্মানির দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং পারস্পারিক সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। ইউরোপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে কর্মরত জার্মান কোম্পানিসমূহ, জার্মান এনজিওসমূহ এবং ইনস্টিটিউটসমূহের প্রশংসনীয় ও সব কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি ভূরাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ও সুবিধাজনক অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের তারুণ্যে উজ্জীবিত মানবসম্পদের সুযোগ-সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক সামষ্টিক ও অর্থনৈতিক নানা সূচকে যেমন- জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চহার, দারিদ্র্য হ্রাস, শিশুমৃত্যু হ্রাস, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, বৃহৎ দেশীয় বাজার, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, দক্ষ জনবল, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতিতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতির চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের দৃঢ় ও সম্ভাবনাময় অবস্থানের চিত্র তুলে ধরেন এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধান উৎস করার জন্য ক্রমাগত উন্নয়নের নিমিত্ত বিএসইসি কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধাজনক দিকসমূহ তুলে ধরে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান।
সামিট আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তা প্রদর্শিত হয়। ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএসইসি ও বিডার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সামিটে অংশগ্রহণ করা সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি জার্মানি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ ৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি থেকে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের সম্ভাবনাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ব্যবসায় সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং জার্মানির বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে গড়ে তোলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এবং প্ল্যানকুয়াড্রেট জিএমবিএইচ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মার্টিন গেসকেস। আরও বক্তব্য রাখেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া।
এ ছাড়াও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, ফ্রাংকফুর্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. হ্যান্স ক্রিস্টোফ সিবোল্ড এবং ‘বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)’র সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব আলী রেজা মজিদ বক্তব্য রাখেন।