আজ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ নভেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

আইপিওর যাচাই-বাছাইয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের আরও ভূমিকা থাকা উচিতঃ এটিএম তারিকুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেছেন, আইপিওর যাচাই-বাছাইয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের আরও ভূমিকা থাকা উচিত। আগে এক্সচেঞ্জের ভালো ভূমিকা ছিল, এখন অনেকটাই কম।
বর্তমানে আইপিওসহ সব ধরনের পাবলিক অফারের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলাদা আলাদা আইন রয়েছে। কোথাও স্টক এক্সচেঞ্জ অনুমোদন দেয় আবার কোথাও রেগুলেটর অনুমোদন দেয়। আমাদের দেশে আগে থেকেই রেগুলেটর আইপিও অনুমোদন দিয়ে আসছে।

ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক (CMJF Talk) অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিএমজেএফের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি জিয়াউর রহমান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী এটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, পুঁজিবাজারের আস্থার উন্নয়নে ফ্লোর প্রাইস কোনো স্থায়ী কোনো সমাধান নয়।

তিনি বলেন, এটা শেয়ার প্রাইস নির্ধারণে সরাসরি হস্তক্ষেপের (Intervention)। রেগুলেটর বা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাইস ফিক্স করা ঠিক না। এটা বিশ্বের কোথাও নেই। স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাইস ডিসকভারের জায়গা।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানে তিনি ডিএসইর বর্তমান অবস্থার নানাদিক এবং এর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

প্রশ্ন-উত্তর পর্বে পুঁজিবাজারের ম্যানুপুলেশন বন্ধ, ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেন, কৌশলগত বিনিয়োগ ও টেকনিক্যাল সহায়তা, ভালো কোম্পানী পুঁজিবাজারে আনা, বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা ও তালিকাভুক্ত কোম্পানীতে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ নানা বিষয় ওঠে আসে।

অনুষ্ঠানে ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডি-মিউচ্যুয়ালইজেশন করা হয়। এই আইনে স্বতন্ত্র পরিচালকদের প্রাধ্যান্য দেওয়া হয়েছে। ট্রেকহোল্ডারদের প্রতিনিধিও রয়েছে। তবে কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছে, কিছু বিষয় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সেটা নিয়ে রেগুলেটরের সাথে আলোচনা করবো আমরা।
ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশনের পর স্টক এক্সচেঞ্জে বেশ কিছু সুফলও এসেছে। মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা আলাদা হয়েছে। সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপে নেই। অপারেশনে বোর্ডের কোনো ইনফ্লুয়েশন নেই। তবে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

কৌশলগত বিনিয়োগকারী থেকে কী পেলাম এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবে টেকনিক্যাল কিছু প্রস্তাব ছিল। সেই প্রস্তাবের কিছু কাজ ইতোমধ্যে হয়েছে। আরও কিছু বাকি রয়েছে। করোনার কারণে বাস্তবায়নের বিলম্ব হয়েছে। আশা করি, অবশিষ্ট কাজও হবে।

বিনিয়োগকারীর সুরক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, বাজারে লাভ-লোকসান থাকবেই। কারো লোকসান হবে না-এমন নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হয়, বিনিয়োগকারীর টাকা যাতে কেউ আত্মসাৎ করতে না পারে- সে ব্যাপারে আমরা তৎপর আছি।

৩৬ বছর ধরে ডিএসইর একই অডিটর দিয়ে নিরীক্ষা করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টিতে আমি অবাক হয়েছি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে অডিটর রোটেশনে জোর দেওয়া হয়। কারণ রোটেশন না করলে অডিটর নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। দীর্ঘ দিন ধরে একসাথে কাজ করতে গিয়ে পরস্পরের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক তৈরী হয়। এতে অডিটর প্রভাবিত হতে পারেন। কারণ অডিটিং হচ্ছে সুশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তিনি বলেন, কেন স্টক এক্সচেঞ্জে অডিটর রোটেশন করলো না, বিষয়টা জানি না। তারা অডিটিং- এর প্রিন্সিপল লঙ্ঘন করেছে। তবে ভাল দিক হচ্ছে, ডিএসইর পর্ষদ সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হলে সবাই অডিটর পরিবর্তন করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।
পুঁজিবাজারে ম্যানুপুলেশন বন্ধে ডিএসই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে কিনা

এ বিষয়ে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে শেয়ার কারসাজি নিয়ে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, অনেক তদন্তই ডিএসই করার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। কারসাজি নিয়ন্ত্রণের ডিএসইর সার্ভিলেন্স টিম কাজ করছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, কারসাজি বন্ধ ও গভীর অনুসন্ধানে ডিএসইর আরও ক্ষমতা প্রয়োজন। বিশেষ করে কারখানা পরিদর্শনের ক্ষেত্রে এটি খুবই জরুরী। কারণ কারসাজি ভালোভাবে ডিগ-আউট করতে ডিএসই তথ্য চাইলে, কেউ নাও দিতে পারে। না দিলে কিন্তু বাধ্য করা বা ব্যবস্থা নেওয়ার মতো এখতিয়ার আমাদের নেই, যা বিএসইসির আছে। বর্তমানে কোনো কারখানায় প্রবেশ করতে না দিলে বা কেউ তথ্য দিতে না চাইলে সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানানো হয়। আবার কারখানা পরিদর্শনের জন্য বিএসইসির কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হয। এই সময়ের মধ্যে ঘটনা আরও নাজুক হয়ে পড়ে। তাই কারসাজির গভীর তদন্তে ডিএসইর আরও ক্ষমতা প্রয়োজন। কারসাজি বন্ধে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

দূর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিশ্চয়ই দেখেশুনেই আইপিও অনুমোদন করে। আর বিএসইসি অনুমোদন করলে সেটি তালিকাভুক্ত করা আমাদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, বাজারের উন্নয়নে আইন-কানুনের কিছু পরিবর্তন ও সংশোধন প্রয়োজন। এগুলো আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে তুলে ধরবো। বিএসইসি এই বাজারের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখছে। তাই আইনের পরিবর্তন ও সংশোধনের বিষয়ে তারা ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলে আশা করছি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.