আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার |

kidarkar

টালমাটাল পুঁজিবাজারের লেনদেনে খরার নেপথ্যে যেসব কারন!

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইসের (শেয়ারের সর্বনিম্ন দর) কারণে এমনিতেই লেনদেন অনেক কমে গেছে দেশের পুঁজিবাজারে। এ অবস্থার মধ্যেই অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের অবনতি, ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। চলমান ডলারের সংকটে পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অনিশ্চয়তার কারণে নতুন বিনিয়োগও আসছে না। সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছে পুঁজিবাজার।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজার কিছুটা শ্লথ থাকে। তবে এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের তুলনায় কিছুটা জটিল। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি। এসব অনুঘটক বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্টদের গভীরভাবে ভাবাচ্ছে। ফলে নতুন বিনিয়োগ আসছে না।

পুঁজিবাজার নিয়ে নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের নীতি কী হবে, সেই আলোচনাও গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই নির্বাচনের পরে বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে নতুন বিনিয়োগে না গিয়ে কিছুটা ‘সাইডলাইনে’ থেকে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন তাঁরা।

সদ্যসমাপ্ত নভেম্বরে আগের মাসের তুলনায় পুঁজিবাজারের দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৬ শতাংশ। মূলত বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমার কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে আসছে। ইবিএল সিকিউরিটিজের মাসিক পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত এক বছরের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালের নভেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক গড়ে ৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের লেনদেন হয়েছে। এর পরের মাসে এ লেনদেনের পরিমাণ কমে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে দৈনিক গড় লেনদেন কিছুটা বেড়ে ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। গত ফেব্রুয়ারিতে এটি কমে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। এ বছরের মার্চে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এরপরের মাসে এটি কিছুটা বেড়ে ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার হয়। গত মে মাসে দৈনিক গড়ে ৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের লেনদেন হয়েছে। এ বছরের জুনে এটি কমে দাঁড়ায় ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারে। জুলাইয়ে এটি আরো কমে ৭ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। আগস্টে দৈনিক গড় লেনদেন ৪ কোটি ডলারে নেমে আসে। গত সেপ্টেম্বরে এটি কিছুটা বেড়ে ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছিল। অক্টোবরে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ এ বছরের নভেম্বরে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের লেনদেন হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ২৭৯ পয়েন্ট। এ বছরের নভেম্বর শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২২৩ পয়েন্টে।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে সূচক ও লেনদেন কমেছে। পুঁজিবাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় দশমিক ১৭ শতাংশ কমে ৬ হাজার ২৩৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ২৫৭ পয়েন্টে। নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ১০৭ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৩৫২ পয়েন্টে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া মোট ৪০৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টির, কমেছে ৯২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২২২টির। এছাড়া লেনদেন হয়নি ২৭টির।

ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ১ হাজার ৯০৭ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ২ হাজার ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক্সচেঞ্জটিতে সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৪০০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

অন্যদিকে দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে ১৮ হাজার ৪৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৮ হাজার ৪৯৬ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে ১১ হাজার ৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৬১ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫২টির, কমেছে ৬৭টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫৬টির।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.