আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

বছরের ব্যবধানে পোশাক শিল্পে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ খাতে প্রকৃত রপ্তানির পরিমাণ ছিল মোট রপ্তানির প্রায় ৭১ শতাংশ। গত বছরের একই প্রান্তিকে এ খাতে প্রকৃত রপ্তানি আয় ছিল মোট রপ্তানির সাড়ে ৫১ শতাংশ। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।

যদিও পোশাক খাতের প্রকৃত আয়ের এ হিসাব নিয়ে খাত–সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সন্দেহ বা প্রশ্ন রয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে অধিকাংশ কারখানা ২০-৩০ শতাংশ কম উৎপাদন সক্ষমতায় চলেছে। গ্যাস-বিদ্যুতের কারণে উৎপাদনও কম-বেশি ব্যাহত হয়েছে। তাই এ খাতের প্রকৃত আয়ের তথ্য নিয়ে তারা সন্দিহান।

খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, ফলে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্য কেনা কমিয়ে দেন। তাতে কমে যায় পোশাক বিক্রিও।

পোশাক খাতের রপ্তানি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ গত ৩০ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) পোশাক খাতের প্রকৃত রপ্তানি বা মূল্য সংযোজন ছিল ৮২২ কোটি মার্কিন ডলারের। পোশাকের মোট রপ্তানি আয় থেকে কাঁচামাল আমদানি বাবদ খরচ বাদ দিয়ে প্রকৃত আয়ের এ হিসাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘পোশাকের মূল্য সংযোজন আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কারণ, হঠাৎ এ খাতে এত মূল্য সংযোজনের যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না। বরং আগের তুলনায় এখন কাপড়সহ অন্যান্য কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে।’

অনেকে প্রকৃত রপ্তানি আয়কে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। তবে অর্থনীতিবিদরা এটিকে মূল্য সংযোজন হিসেবে মানতে নারাজ। তারা বলছেন, পোশাকশল্পে নির্দিষ্ট একটি সময়ে যে পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করা হয়, সেগুলো রপ্তানির ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা যায়। তাই, একটি নির্দিষ্ট সময়ের রপ্তানি আয় থেকে আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত যে আয় পাওয়া যাবে, সেটিকে প্রকৃত মূল্য সংযোজন বলা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানি বাবদ মোট আয় ছিল এক হাজার ১৬২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩৯ কোটি ডলার। তাতে এ খাতের মোট রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ৮২২ কোটি ডলারে, যা এ খাতের মোট আয়ের প্রায় ৭১ শতাংশ। অথচ ২০২২–২৩ অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) এক হাজার ২৭ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি বাবদ ব্যয় ছিল ৪৯৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে প্রকৃত রপ্তানি আয় ছিল ৫২৯ কোটি ডলার, যা মোট আয়ের সাড়ে ৫১ শতাংশ।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে পোশাক খাতের প্রকৃত রপ্তানি হঠাৎ করে বেড়ে ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের ৭১ শতাংশই ছিল প্রকৃত আয়। এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে তা বেড়ে হয় সাড়ে ৭১ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পোশাক খাতের রপ্তানির বিপরীতে আমদানির যে তথ্য, তাতে আমদানি খরচ অনেক কমেছে। কয়েকটি কারণে এটি হতে পারে, প্রথমত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় আমদানিও কমতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববাজারে পোশাকের কাঁচামালের দাম কিছুটা কমেছে, তাই এ বাবদ খরচ কমে গেছে। তৃতীয় কারণ হতে পারে, ডলার–সংকটের কারণে আমদানি কম হয়েছে।

পোশাক খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওভেন পোশাকের চেয়ে নিট পোশাকে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ বেশি। ওভেন পোশাক রপ্তানি করে যে আয় হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানির পেছনে ব্যয় হয়ে যায়। আর নিট পোশাকের ক্ষেত্রে রপ্তানি আয়ের ১৫ শতাংশের মতো খরচ হয় কাঁচামাল আমদানিতে। এ কারণে দেখা যাচ্ছে, কয়েক বছর ধরে ওভেনের তুলনায় নিট পোশাক রপ্তানিতে ভালো করছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে পোশাক খাতের এক হাজার ১৬২ কোটি ডলারের রপ্তানির মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৭৬ কোটি ডলার। আর একই সময়ে ওভেন পোশাকের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৮৫ কোটি ডলার। চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পোশাক রপ্তানি আয়ের প্রায় সাড়ে ৪৯ শতাংশই ছিল নিট পোশাকের, আর ওভেনের সাড়ে ৩৫ শতাংশ।

গত ২০১৯–২০ অর্থবছরেও নিট এবং ওভেন পোশাকের রপ্তানি ছিল প্রায় সমান সমান। ২০২০–২১ অর্থবছর থেকে ওভেনকে ছাড়িয়ে যায় নিট পোশাকের রপ্তানি। এরপর প্রতি অর্থবছরই নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২২–২৩ অর্থবছরে পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের প্রায় সাড়ে ৪৬ শতাংশ ছিল নিট খাতের আর ওভেন খাতের ছিল সোয়া ৩৮ শতাংশ।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, করোনার পর থেকে বিশ্ববাজারে নিট পোশাকের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এমনকি করোনাকালেও নিট পোশাকের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। কারণ, করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের সময় দেশে দেশে লকডাউন জারি করা হয়। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘরের বাইরে পরার পোশাকের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যায়।

নিট পোশাক বলতে সাধারণত গেঞ্জির কাপড়ের তৈরি পোশাকই বোঝায়। যেমন টি-শার্ট, পলো শার্ট, সোয়েটার, ট্রাউজার, জগার, শর্টস প্রভৃতি। অন্যদিকে ফরমাল শার্ট, প্যান্ট, স্যুট, ডেনিম প্রভৃতি ওভেন পোশাক হিসেবে

প্রতিবেদন বলছে, গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে দেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ের ৭০ শতাংশই এসেছে মাত্র নয়টি দেশ থেকে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর রয়েছে যথাক্রমে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও কানাডা। এ সময়ে এ দেশগুলো থেকে পোশাক রপ্তানি বাবদ আয় হয়েছে ৮১১ কোটি ডলার। এসব দেশের বাইরের দেশগুলো থেকে পোশাক রপ্তানি বাবদ আয় ছিল ৩৫২ কোটি ডলার।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.