আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২০ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

বাংলাদেশের ২৯১ রানের পুঁজি, সৌম্যর রেকর্ড ১৬৯

স্পোর্টস ডেস্ক: বারকয়েক ভাগ্যের সাহায্য পেয়েছেন। ৯২ রানে এসে নার্ভাস নাইন্টিজেই প্রায় কাটা পড়তে যাচ্ছিলেন। বড় শট খেলতে গিয়ে বল তুলে দেন ত্রিশ গজের মধ্যে। কিন্তু উইল ইয়ং সে ক্যাচ ফেলে দেন। ভাগ্য বরাবরই সাহসীদের পক্ষে থাকে। সৌম্য সরকারের বেলায় সেটা যেন প্রমাণ হলো আরও একবার।

ফর্মে ফেরার দিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিও তুলে নিলেন সৌম্য, প্রায় পাঁচ বছর পর। চোখ ধাঁধানো ঝোড়ো ইনিংসের সঙ্গে আরও কয়েকটি রেকর্ড।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন সৌম্য। সবমিলিয়ে ওয়ানডেতে দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা ইনিংসের মালিক এখন তিনি। এর চেয়ে ভালো প্রত্যাবর্তন আর কী হতে পারতো!

সৌম্যর ১৫১ বলে ১৬৯ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে ভর করে বাঁচামরার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪৯.৫ ওভারে ২৯১ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ জিততে হলে ২৯২ করতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।

নেলসনের সাক্সটন ওভালে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম। এনামুল হক বিজয় আর সৌম্য সরকারের জুটিটা ভাঙে পঞ্চম ওভারে দলীয় ১১ রানেই।

অ্যাডাম মিলনের বেরিয়ে যাওয়া বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বিজয়। ১২ বল খেলে তিনি করেন মাত্র ২ রান।

সঙ্গী হারালেও সৌম্যকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল, উইল ও’রউরকের করা ইনিংসের অষ্টম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান এ বাঁহাতি। কিন্তু পরের ওভারেই ফের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। এবার সৌম্যকে রেখে ফেরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

বরাবরের মতো দৃষ্টিকটু আউট শান্ত। জ্যাকব ডাফির বলটি আলগাভাবে ফ্লিক করতে গেলে ব্যাটের সাইডে লেগে উঠে যায় আকাশে। সহজ ক্যাচ নেন নিকোলস। ৯ বলে বাংলাদেশ দলপতি করেন ৬ রান। দলীয় ৩৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর লিটন কিউই পেসার ডাফির বলে দৃষ্টিনন্দন এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পরের বলেই কভার পয়েন্টে উইকেট বিলিয়ে আসেন। ১১ বলে করেন ৬ রান। ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

সৌম্য আর তাওহিদ হৃদয়ের জুটিটা ভালোভাবেই এগোচ্ছিল। ৩৬ রানে তাদের জুটি ভাঙে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। সৌম্যর শট বোলার ক্লার্কসনের হাতে লেগে ভেঙে যায় ননস্ট্রাইকের স্টাম্প। হৃদয় কিছুটা বাইরে ছিলেন। ১৬ বলে ১২ করে ফিরতে হয় তাকে।

সৌম্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সবশেষ ৬ ইনিংসই খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এর মধ্যে তিন ইনিংসে ০, একটিতে ১। সৌম্যর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা রীতিমত বিষাদের ছায়ায় ঢেকে পড়েছিল। দল থেকেও বাদ পড়েন।

মাঝে আড়াই বছর ওয়ানডে দলে জায়গা পাননি। বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ইচ্ছাতে দলে ফেরেন। কিন্তু এক ইনিংস ব্যাট করে ০ উপহার দিলে তাকে আর বিশ্বকাপ দলে নেয়ার ঝুঁকি নেননি হাথুরু।

তবে বিশ্বকাপ শেষ হতেই আবার সৌম্য দলে। এবারও ফিরেই ০। মনে হচ্ছিল, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জায়গা হারাতে পারেন।কিন্তু আরেকটি সুযোগ পেয়ে যান সৌম্য। এবার আর ভুল করেননি। ৫৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে পঞ্চাশ ছোঁন সৌম্য।

২০১৯ সালের জুলাইয়ে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এরপর আর ফিফটি পাননি। দলে আসা যাওয়ার মাঝে অবশ্য এই সময়ে খেলেছেন মোটে ৯টি ওয়ানডে, ৬টিতে করেছেন ব্যাটিং। এর মধ্যে পাঁচ ইনিংসেই দশের নিচে আউট।

দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর সৌম্য আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে রান পেলেন। ফিফটির পর অবশ্য ক্যাচ দিয়েছিলেন। রাচিন রাবিন্দ্র কভারে কঠিন সে ক্যাচ ফেলে দেন।

৮০ রানে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ৪ উইকেট। সেখান থেকে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে দারুণ এক জুটি সৌম্যের। ১০৭ বলে তারা যোগ করেন ৯১ রান। মুশফিককে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ বানিয়ে জুটিটি অবশেষে ভাঙেন ডাফি। ৫৪ বলে ৫ বাউন্ডারিতে মুশফিক করেন ৪৫।

তবে সৌম্য তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ১১৬ বলে। চার-ছক্কায় মাঠ গরম করা সৌম্যের সুযোগ ছিল দেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডটি নিজের করে নেয়ার।

২০২০ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন লিটন দাস। সৌম্য মাত্র ৮ রানের জন্য তাকে পেছনে ফেলতে পারেননি। ইনিংসের পাঁচ বল বাকি থাকতে ও’ররকির বলে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। ১৫১ বলে গড়া সৌম্যের ১৬৯ রানের ইনিংসে ছিল ২২টি চার আর ২টি ছক্কা।

নিউজিল্যান্ডের ও’ররকি আর জ্যাকব ডাফি নেন তিনটি করে উইকেট।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.