রেকর্ড গড়েও জেতা হলো না বাংলাদেশের
স্পোর্টস ডেস্ক : শুরুতে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলেন সৌম্য সরকার। ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংসে পেলেন অভিবাদনও।
তার ইনিংস জায়গা করে নিল রেকর্ডবুকে। কিন্তু দলের বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দলের রান তিনশ ছুঁতে পারেনি।
রান তাড়া পরে কখনোই কঠিন হয়নি নিউজিল্যান্ডের। দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরির আফসোস থাকলেও জয়টা ঠিকই পেয়েছে তারা। নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২২ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ১৫১ বলে ১৬৯ রান করেন সৌম্য। কিন্তু বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৯১ রানে। পরে জবাব দিতে নেমে ২২ বল আগেই জয় পায় কিউইরা। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতল স্বাগতিকরা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটারদের আউট হওয়ার শুরুটা হয় এনামুল হক বিজয়কে দিয়ে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো টম লাথামকে ক্যাচ দেন তিনি। এডাম মিলনের বলে আউট হওয়ার আগে ১২ বলে করেন ২ রান। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এ ম্যাচেও রানটা বড় করতে পারেননি।
৯ বলে ৬ রান করে ফ্লিক করতে গিয়ে কাভারে দাঁড়ানো হেনরি নিকোলসের হাতে ক্যাচ দেন শান্ত। লোপ্পা ক্যাচ দিয়ে ওই ডাফির করা পরের ওভারে ফিরে যান লিটন দাসও। ১১ বলে ৬ রান করে উইল ইয়াংয়ের হাতে ধরা দেন তিনি।
৪৪ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তরুণ তাওহীদ হৃদয় সঙ্গী হন সৌম্য সরকারের। তাদের দুজনের জুটিতে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল রান। কিন্তু এবার দুর্ভাগ্যই সঙ্গী হয় বাংলাদেশের। ক্লার্কসনকে স্ট্রেইট ড্রাইভ করেন সৌম্য। সেটি বোলারের আঙুল ও ট্রাউজার ছুঁয়ে যায় নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে।
ক্রিজে ছেড়ে এগিয়ে থাকা হৃদয় আউট হয়ে যান ১৬ বলে ১২ রান করে। তবে একপ্রান্তে ঠিকই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য। শেষ অবধি এসে একজন ভালো সঙ্গীও পেয়ে যান তিনি। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে মিলে দলের বিপর্যয় সামাল দেন সৌম্য। এ দুজনের জুটিতে ১০৮ বলে আসে ৯১ রান।
৫৭ বলে ৪৫ রান করে মুশফিক উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে এই জুটি ভাঙে। পরে সঙ্গী বদলালেও সৌম্যর রানের গতি থামেনি। ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি।
ইনিংসের শেষ ওভারে গিয়ে যখন আউট হন, তখনও অনেক রেকর্ড তার নামের পাশে। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা লিটন দাসের ১৭৬ রানের ইনিংসের পর দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস এখন সৌম্যের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো এশিয়ান ব্যাটারেরও সর্বোচ্চ রানও তার ১৬৯। আগেরটি ছিল ২০০৯ সালে শচীনের করা ১৬৩ রান।
নিজের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলে ফেলার পর আউট হন সৌম্য। তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৪৯। সৌম্য আউট হওয়ার পর দলের ইনিংসও আর বেশিদূর যায়নি। যোগ করতে পেরেছে কেবল এক রান।
ছোট মাঠ আর ব্যাটিং উইকেটে রান তাড়ায় নেমে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৬১ রান করে নিউজিল্যান্ড, হারায়নি কোনো উইকেট। ঠিক পরের ওভারে এসেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন হাসান মাহমুদ। ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ বলে ৪৫ রান করে আউট হন রাচিন রবীন্দ্র।
পরের উইকেট বাংলাদেশ যতক্ষণে পায়, ততক্ষণে ম্যাচের মোড় ঘুরে গেছে পুরোপুরি। ১২৮ রানের জুটিতে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন হেনরি নিকোলস ও উইল ইয়াং। আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ইয়াং এদিন পুড়েন সেঞ্চুরি আক্ষেপে। তাকেও ফেরান হাসান মাহমুদ। ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৯৪ বলে ৮৯ রান করেন ইয়াং।
ইয়াংয়ের সঙ্গী নিকোলসও অল্পের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন। সেঞ্চুরি থেকে কেবল ৫ রান দূরে থাকতে শরিফুল ইসলামের বলে রিশাদ হোসেনকে ক্যাচ দেন তিনি। কেউই সেঞ্চুরি করতে না পারলেও জিততে কোনো সমস্যা হয়নি কিউইদের। কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম (৩৪*) ও উইকেটকিপার-ব্যাটার টম ব্লান্ডেল (২৪*) মিলে বাকি পথ অনায়াসেই পাড়ি দেন।