আজ: বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ইং, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, রবিবার |

kidarkar

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থগিত করলেন নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অভিযান চলছে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় নানামুখী আলোচনা চললেও এখনও তা সম্ভব হয়নি।

আর এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থগিত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাসের দাবিগুলো ‘ভ্রমপূর্ণ’ বা বিভ্রান্তিকর বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শনিবার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুরোধে ইসরায়েল কায়রোতে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য আলোচকদের পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারা আরও বিস্তৃত আলোচনায় ফিরে যায়নি কারণ হামাসের দাবিগুলো ‘ভ্রমপূর্ণ’।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সাথে একটি রাষ্ট্রীয় চুক্তির বিষয়ে ‘আন্তর্জাতিক হুকুম’ মেনে নেবে না। তার দাবি, শুধুমাত্র পূর্বশর্ত ছাড়াই সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে এমন লক্ষ্যে পৌঁছানো যেতে পারে।

রয়টার্স বলছে, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে এবং হামাস শাসিত অঞ্চলে আটক থাকা ১০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য মিসর এবং কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনায় এখনও কোনও ফলাফল আসেনি। গত মঙ্গলবার কায়রোতে এক দফা সিদ্ধান্তহীন আলোচনা শেষ হয়েছে।

ইসরায়েলি আলোচকরা কেন আরও আলোচনার জন্য কায়রোতে ফিরে আসেননি শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হলে নেতানিয়াহু বলেন: ‘হামাসের কাছ থেকে বিভ্রান্তিকর দাবি ছাড়া আমরা কিছুই পাইনি।’

তিনি বলেন, এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের অবসান এবং হামাসকে আগের মতোই ছেড়ে দেওয়া, ইসরায়েলি কারাগার থেকে ‘হাজার হাজার খুনিকে’ মুক্ত করা, এমনকি জেরুজালেমের বিষয়েও তাদের (হামাসের) দাবি রয়েছে।

তিনি বলেন, কায়রোতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা ‘বসেছিলেন এবং সবার কথা শুনেছিলেন। এবং এতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এক মিলিমিটার তো নয়ই – এক ন্যানোমিটারও পরিবর্তন হয়নি’। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন না দেখা পর্যন্ত’ তাদের আবারও (আলোচনায়) ফিরে যাওয়ার কোনও কারণ নেই।

এদিকে হামাসের সাথে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে হাজার হাজার ইসরায়েলি তেল আবিবের সামরিক সদর দপ্তরের বাইরে জড়ো হয়েছিল। তারা এসময় বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ছবি এবং নানা প্ল্যাকার্ড সামনে রাখে। এর মধ্যে একটিতে লেখা ছিল: ‘সময় ফুরিয়ে আসছে!’

এসব বিক্ষোভকারীদের একজন মাইকেল লেভি। তার ভাই অরকে গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার সময় বন্দি করেছিল হামাস। তিনি বলছেন, ‘আমাদের আর সময় নেই।’

তিনি তার ভাইয়ের ছবিসহ তার শার্টের দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিরতি দিয়ে বলেন, ‘আমার ভাই তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন, (তিনি) গত বছরের ৭ অক্টোবর এই ভয়াবহ হামলায় খুন হয়েছেন। তার একটি ছেলে রয়েছে, ২ বছরের ছেলে, বাড়িতে সে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করছে।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে অন্তত ২৮ হাজার ৭৭৫ জন নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাব্য ‘একতরফা স্বীকৃতি’ সম্পর্কে নেতানিয়াহু বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের জন্য এর চেয়ে বড় পুরস্কার’ হতে পারে না। তার দাবি, ‘আমার নেতৃত্বে ইসরায়েল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একতরফা স্বীকৃতির তীব্র বিরোধিতা করবে। পূর্ব শর্ত ছাড়াই শুধুমাত্র উভয় পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে একটি ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.