পিলখানা হত্যাকাণ্ড: চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক: পিলখানা ট্র্যাজেডির ভয়াবহ নৃশংসতার ১৫ বছর পার করতে যাচ্ছে আজ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। তবে এখনও এ ঘটনায় করা দুটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। তার মধ্যে হত্যা মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ঝুলে আছে। আর বিস্ফোরক মামলাটি বিচারিক আদালতের গণ্ডিই পার করতে পারেনি। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে মামলাটি শুনানি শুরু করা যাচ্ছে না।
এদিকে হত্যা ও বিদ্রোহ মামলায় প্রায় দুই শতাধিক আসামির খালাস মিললেও আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি না হওয়ায় কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না। এ মামলায় আপিল দ্রুত শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
রাজধানীর পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি কোনো মামলার। এ ঘটনায় দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। ২০১১ সালে শুরু হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার ঢাকার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, তবে দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর ছয় বছরে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি হয়নি। তবে এ বছরের মধ্যে আপিল শুনানি শুরু হতে পারে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। আসামিপক্ষের প্রত্যাশা, আপিল বিভাগে বিচারক বাড়িয়ে আলাদা বেঞ্চ গঠন করে দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরে বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ সময় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার বিচারিক আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আটজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে বিচার চলার সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন।
অপরদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার কারণে মামলার বিচারকাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ২৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এখন প্রতি মাসে দুই দিন বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে। এ বছর বিচার শেষ হবে বলে আশা করছি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা মামলার বয়স এখন ১৫ বছর। হত্যা মামলাটির দুই ধাপ শেষ হলেও বিস্ফোরক মামলার বিচারের গতি অত্যন্ত শ্লথ। প্রায় ১৩০০ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ২৭৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আগামী ২৮-২৯ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী তারিখ। হত্যা মামলায় হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায়সহ যাবতীয় নথিপত্র আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। আপিলের সারসংক্ষেপও জমা দেওয়া হয়েছে, কোনো কিছুই বাকি নেই। যেভাবেই হোক ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচারকের সংখ্যা বাড়িয়ে এবং আলাদা বেঞ্চ গঠন করে এ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, পিলখানা হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত শুনানি করতে আপিল বিভাগে আলাদা বেঞ্চ গঠন করতে হবে। তা ছাড়া আপিল বিভাগে এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত বিচারক নেই।
আরও চারজন বিচারক প্রয়োজন। কয়েক হাজার পৃষ্ঠার আপিল উভয়পক্ষ শুনানি করতে টানা ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে। শিগগিরই আপিল বিভাগে নতুন বিচারক নিয়োগ হবে। এরপর পৃথক বেঞ্চ গঠন হলে শুনানি শুরু হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে মামলা শুরু করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ১৩৯ জনের ফাঁসি বহালের পাশাপাশি যাদের সাজা কমানো হয়েছে, সে বিষয়েও শক্ত অবস্থান নেবে রাষ্ট্রপক্ষ। সরকার পক্ষ থেকে আমরা আশা করছি যে ট্রায়েল কোর্ট যাদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন এবং যাদেরকে হাইকোর্ট কনফার্ম করেছেন বা মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন, সেটা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকবে।
এ মামলার সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আসামির আইনজীবী আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে আমাদের আকুল আবেদন, এ নিরীহ আসামিদের দিক বিবেচনা করে এবং উভয় দিক বিবেচনা করে এই মামলার শুনানি কার্যক্রম যদি দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তাহলে আমার মনে হয় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। উচ্চ আদালতে না হয় বিচারক সংকট আছে কিন্তু নিম্নআদালতে তো বিচারক সংকট নেই। কিন্তু নিম্নআদালতের মামলা আজ ১৫ বছর ধরে ট্রায়েল চলছে। এ বিষয়ে তো রাষ্ট্রপক্ষের একটা ব্যাখ্যা থাকা উচিত।