ভারতীয় কূটনীতিকদের কানাডায় ‘হুমকি, ভয় দেখানো’ হয়েছিল: জয়শঙ্কর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতীয় কূটনীতিকদের কানাডায় ‘হুমকি ও ভয় দেখানো’ হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর। এছাড়া লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে এবং সান ফ্রান্সিসকোতে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলায় জড়িতদের ভারত শাস্তি চায় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর গত বছর নয়াদিল্লির সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল এবং সেই বিষয়েই ফের সরব হলেন সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত গত বছর লন্ডনের হাইকমিশনে এবং সান ফ্রান্সিসকোর কনস্যুলেটে হামলায় জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে এবং কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিকদের হুমকি দেওয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ আশা করে বলে সোমবার জানিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর।
তিনি দাবি করেছেন, ভারতকে কানাডার নাগরিকদের ভিসা প্রদান স্থগিত করতে হয়েছিল কারণ ভারতীয় কূটনীতিকদের বারবার ‘বিভিন্ন উপায়ে হুমকি ও ভয় দেখানো হয়েছিল’ এবং আমরা ‘সেই সময়ে কানাডার পক্ষ থেকে খুব কম স্বস্তি খবরই পেয়েছিলাম’।
মূলত গত বছরের জুন মাসে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং কানাডিয়ান নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের ভূমিকা ছিল বলে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ সামনে আনার পর ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক গুরুতরভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
নিহত নিজ্জার নয়াদিল্লির চোখে ‘সন্ত্রাসী’ হলেও তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দেয় ভারত। এই পরিস্থিতিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কানাডিয়ান নাগরিকদের জন্য ভিসা ইস্যু করা স্থগিত করে ভারত।
যদিও এর কয়েক সপ্তাহ পরই কানাডিয়ান নাগরিকদের জন্য আবার ভিসা ইস্যু করা শুরু করে নয়াদিল্লি।
ভারতের একটি টিভি নেটওয়ার্ক আয়োজিত এক সম্মেলনে সোমবার জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমরা আশা করি সান ফ্রান্সিসকোতে আমাদের কনস্যুলেটে হামলায় জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে, লন্ডনে আমাদের হাইকমিশনে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশাও আমরা করছি এবং যারা আমাদের কূটনীতিকদের (কানাডায়) হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রত্যাশা করছি আমরা।’
গত বছরের ১৯ মার্চ লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে খালিস্তানপন্থিরা আক্রমণ করেছিল। আর জুলাই মাসে সান ফ্রান্সিসকোতে ভারতীয় কনস্যুলেটে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা হয়েছিল। আর একই বছরের সেপ্টেম্বরে কানাডায় হুমকির মুখে পড়েন ভারতীয় কূটনীতিকরা।
জয়শঙ্কর দাবি করেন, ‘আমাদের কানাডায় ভিসা প্রদান স্থগিত করতে হয়েছিল কারণ আমাদের কূটনীতিকরা নিরাপদে কাজ করতে পারছিল না। আমাদের কূটনীতিকদের বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাদের বিভিন্ন উপায়ে ভয় দেখানো হয়েছিল এবং আমরা সেই সময়ে কানাডিয়ান সিস্টেম থেকে খুব কম সান্ত্বনা পেয়েছিলাম।’
ভারতের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূতদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাদের প্রাণহানির ঝুঁকি ছিল। তাই আমরা কানাডার নাগরিকদের ভিসা প্রদান করা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। এখন অবশ্য ভিসা প্রদান ব্যবস্থা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
তার দাবি, আসলে বাক স্বাধীনতার নামে কূটনীতিকদের ভয় দেখানো যায় না। এটা বাক স্বাধীনতার অপব্যবহার বলে মনে করি আমি। হাই কমিশনারদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। তাদের কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। ভারতের পতাকা নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো, এটাকে কী বাক স্বাধীনতা বলা যায়? আমেরিকাতেও একই ধরনের হামলা হয়েছিল। সেই দেশে এই ঘটনার তদন্ত চলছে। যদি কানাডা কোনও পদক্ষেপ না নেয়, তবে সেটাকেও একটা বার্তা হিসেবেই নিতে হবে।
অবশ্য এরপর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানান জয়শঙ্কর। তবে তার দাবি, এই ধরনের হামলার সাথে জড়িত দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে, আমরা আসলে আমাদের হাইকমিশনকে জনতার আক্রোষের শিকার হতে দেখেছি এবং সত্যই আমরা যে ধরনের নিরাপত্তা পাওয়ার আশা করেছিলাম, তা পাইনি। যুক্তরাজ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আমরা আজ অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে অনেক দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, গত বছর কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তোলেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গত বছরের ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয় ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জারকে। হাউস অব কমন্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার পেছনে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করার মতো বিশ্বাসযোগ্য কারণ রয়েছে।
ভারত অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এছাড়া ভারত ২০২০ সালে নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে ঘোষণা করে এবং নিজ্জারকে হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর আনা অভিযোগটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে নয়াদিল্লি।