আজ: সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ মার্চ ২০২৪, শনিবার |

kidarkar

বিশ্ববাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে সোনা, ফের বাড়তে পারে দেশেও

শেয়ারবাজার ডেস্ক : সপ্তাহজুড়ে বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে সোনার দাম। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বিশ্বাবাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে উঠে এসেছে দামি এই ধাতুটি। বিশ্বাবাজারে দাম বাড়ার মধ্যে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে দেশের বাজারেও অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এখন সোনা সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম আরও প্রায় ৫০ ডলার বেড়ে গেছে। ফলে দেশের বাজারে যে কোনো মুহুর্তে আবারও সোনার দাম বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাবে এই খবর আগেই দিয়ে রেখেছে। এখন সোনার দাম বাড়ার এটি অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া ভূরাজনৈতিক কারণেও সোনার দাম বাড়ছে। অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ হিসেবে ডলার কিনছে। সবকিছু মিলেই সোনার দাম বাড়ছে।

তারা ধারণা করছেন, চলতি বছর প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৩০০ ডলার হয়ে যেতে পারে। গত সপ্তাহে সোনার দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে প্রত্যাশিত এই দামে যেতে আর খুব একটা বাকি নেই। এরই মধ্যে প্রতি আউন্স সোনার দাম প্রায় ২ হাজার ২০০ ডলার হয়ে গেছে।

বিশ্ববাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৮৩ দশমিক ৪৩ ডলার। গত সপ্তাহে লেনদেন শুরু হওয়ার পর পরেই সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ৮ ডিসেম্বর লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ১৯৩ ডলারে উঠে যায়। সোনার এতো দাম বিশ্ববাসী আগে আর দেখেনি।

অবশ্য এই রেকর্ড দাম হওয়ার পর লেনদেনের শেষদিকে দাম কিছুটা কমে। গত সপ্তাহের লেনদেন শেষে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ১৭৮ দশমকি ৬৪ ডলারে থিতু হয়েছে। এর মাধ্যমে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৯৫ দশমিক ২১ ডলার বা ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এর আগে ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রতি আউন্স সোনার দাম ১২৪ দশমিক ৭৩ ডলারে উঠে। এতোদিন বিশ্ববাজারে সোনার এটিই ছিলো সর্বোচ্চ দাম। এখন সেই রেকর্ড ভেঙে আরও অনেক উপরে চলে গেলো সোনা।

বিশ্ববাজারে সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার মধ্যে গত ৬ মার্চ বৈঠক করে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি। যা কার্যকর হয় ৭ মার্চ থেকে। এর মাধ্যমে দেশের বাজারেও সোনার দাম নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়।

৭ মার্চ থেকে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ২১৭ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৯০৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৯৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৭৭৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৮০০৮ টাকা বাড়িয়ে ৯২ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা বাড়িয়ে ৭৬ হাজার ৯৮২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের বাজারে সোনার এতো দাম আগে আর হয়নি।

অবশ্য সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গহনা বিক্রি করা হয়। সেই সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে আগামীকাল থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের ১ লাখ ২২ হাজার ৫২ টাকা গুনতে হবে।

দেশের বাজারে সোনার দাম যখন বাড়ানো হয়, সে সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ১৩০ ডলারের মতো। অর্থাৎ দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রতি আউন্স আরও প্রায় ৫০ ডলার বেড়ে গেছে। ফলে দেশের বাজারে আবারও সোনার দাম বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং’র চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববাজারে যেহেতু সোনার দাম বেড়েছে, সেহেতু আমাদের বাজারেও দাম বাড়ানো ছাড়া পথ নেই। দাম বাড়াতে তো হবেই। এটার একটা ভারসাম্য রাখতে না পারলে ভয়াবহ সাইড এফেক্ট আছে। সোনা পাচার হয়ে যেতে পারে। এ জন্য আমাদের দাম বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, সোনার নতুন দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা স্থানীয় বাজার আরও কয়েকদিন দেখবো। কারণ আমাদের দেশে তো এখন সোনা আমদানি হয় না। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি আমরা স্থানীয় বাজার পরিস্থিতি দেখি। স্থানীয় বুলিয়ান মার্কেটে দাম বাড়লে আমরাও দাম বাড়াবো।

সোনার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মাসুদুর রহমান বলেন, কয়েকটা জেনুইন কারণ আছে। প্রথম কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ যখন সুদের হার বাড়ায় তখন সোনার দাম কমে যায়। কারণ ডলারের প্রতি মানুষ তখন ঝুঁকে যায়। ওরা গত এক-দেড় মাস আগে একটা সার্কুলার দিয়ে রাখছে সুদের হার কমিয়ে দেবে। যখন কমিয়ে দেবে তখন সোনার দিকে মানুষ ঝুঁকে যায়। গোল্ডোর দাম তখন বাড়ে, এটা প্রধান কারণ।

এছাড়া ভূরাজনৈতিক একটা কারণ আছে। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমিয়ে দেখবে প্রতিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনাকে ডলারের পরিবর্তে রিজার্ভ হিসেবে কেনে। যখন কেনে তখন সাপ্লাই চেনে প্রভাব পড়ে। তখন যারা গোল্ডের ব্যবসা করে তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এটাই কারণ, বলেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং’র চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের যে রেকর্ডটা আমরা দেখেছি প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৩০০ ডলার এই বছর হয়ে যেতে পারে। সেটা রাতারাতি হবে না। কিন্তু এখন দেখছি প্রায় ২ হাজার ২০০ ডলারের কাছাকাছি চলে গেছে। তাতে আমার কাছে মনে হচ্ছে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল যে প্রেডিকশন করছে তা হিট করবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.