আজ: সোমবার, ১৩ মে ২০২৪ইং, ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ মার্চ ২০২৪, সোমবার |

kidarkar

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ ৫৬ কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্ধারিত কারসাজি বন্ধে বাধ্যতামূলক পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা রাখতে ব্যর্থ অর্ধশতাধিক কোম্পানি। তিন বছরেও ২০২১ সালের করা বাধ্যতামূলক পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে পারেনি তালিকাভুক্ত ৫৬টি কোম্পানি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ২০১০ সালে করা এ বিধানটি মূল মার্কেটে নতুন তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। তবে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর এক নির্দেশনায় তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির জন্য এটি বাধ্যতামূলক করে কমিশন। তবে তিন বছরেও পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে পারেনি তালিকাভুক্ত ৫৬টি কোম্পানি। অথচ স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর মার্কেট এসএমইতে এমন ১১টি কোম্পানি রয়েছে যেগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা থেকে ৬৭ কোটি টাকা পর্যন্ত। আর দেড় কোটি টাকারও কম মূলধনী কোম্পানি রয়েছে যেগুলো লেনদেন করছে মূল মার্কেটে। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সূত্র মতে, স্টক এক্সচেঞ্জের মূল পর্ষদে তালিকাভুক্ত যে কোনো কোম্পানিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম (তালিকাকরণ) প্রবিধান, ২০১৫ অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন হিসেবে অন্তত ৩০ কোটি টাকা থাকতে হবে। এ বিয়ষে ২০২১ সালে কঠোর অবস্থান নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সেই বছরের ৯ ডিসেম্বর এক নির্দেশনায় বিএসইসি জানায়, তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন অন্তত ৩০ কোটি টাকা থাকতে হবে। এর লক্ষে ৬৪টি কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করার নির্দেশ দেওয়া হয় বিএসইসির ঐ নির্দেশনায়। সেই সঙ্গে মূল মার্কেটেলেনদেনের সুযোগ বহাল রাখতে কোম্পানি ভেদে ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া সময়ে ৬৪টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৮টি কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা উন্নীত করতে পেরেছে। বাকি কোম্পানিগুলো মূলধন বাড়াতে ব্যর্থ হয়। তবে নূন্যতম মূলধন বাড়াতে না পারা এসব কোম্পানিগুলো এখনো পুঁজিবাজারের মূল মার্কেটে লেনদেন বহাল রয়েছে। ২০১০ সালে বিএসইসির দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোন কোম্পানিকে মূল বোর্ডে লেনদেনের জন্য পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত হতে হলে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা থাকতে হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, ম্যানিপুলেটররা সাধারণত ছোট-ক্যাপ স্টকগুলোকে লক্ষ্য করে। যা সহজেই হেরফের করা যায় এবং তাদের শেয়ারের চাহিদা কৃত্রিমভাবে স্ফীত করার সম্ভাবনা থাকে। তবে সবগুলো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে গভীরতা আনবে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা হবে।

পরিশোধিত মূলধন হলো- স্টকের শেয়ারের বিনিময়ে শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে কোনো কোম্পানির প্রাপ্ত অর্থ। সিকিউরিটিজ বিধি অনুসারে, কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি রাইট শেয়ার, স্টক লভ্যাংশ এবং পুনরাবৃত্ত পাবলিক অফারের মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারে।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে ৩০ কোটি টাকার নিচে পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি রয়েছে ৫৬টি। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকার নিচে পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি রয়েছে ১১টি। কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস (১ কোটি ৪৪ লাখ), সাভার রিফ্র্যাক্টরিস (১ কোটি ৩৯ লাখ), লিবরা ইনফিউশনস (২ কোটি ২৫ লাখ), জুট স্পিনার্স (১ কোটি ৭০ লাখ), রেনউইক যগেশ্বর (২ কোটি), নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং (২ কোটি ১৪ লাখ), এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস (২ কোটি ৪০ লাখ), মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারি (৩ কোটি ৬০ লাখ), ফার্মা এইডস (৩ কোটি ১২ লাখ), বিডি অটোকারস (৪ কোটি ৩২ লাখ) এবং রেকিট বেনকিজার (৪ কোটি ৭২ লাখ)।

পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ১০ কোটি টাকার নিচে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১৭টি। সেগুলো হচ্ছে- কে অ্যান্ড কিউ (৬ কোটি ৮৫ লাখ), সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ (৫ কোটি ৪২ লাখ), শ্যামপুর সুগার (৫ কোটি টাকা), আজিজ পাইপস (৫ কোটি ৩৪ লাখ), এপেক্স ফুডস (৫ কোটি ৭০ লাখ), জিল বাংলা সুগার মিল (৬ কোটি), আরামিট লিমিটেড (৬ কোটি), স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক (৬ কোটি ৪৬ লাখ), ন্যাশনাল টি (৬ কোটি ৬০ লাখ), দেশ গার্মেন্টস (৮ কোটি ২৮ লাখ), বঙ্গস (৭ কোটি ৬২ লাখ), দুলামিয়া কটন (৭ কোটি ৫৫ লাখ), ইমাম বাটন (৭ কোটি ৭০ লাখ), প্রাণ (৮ কোটি), এপেক্স স্পিনিং (৮ কোটি ৪০ লাখ), জিকিউ বলপেন (৮ কোটি ৯২ লাখ) এবং রহিম টেক্সটাইল (৯ কোটি ৪৬ লাখ)।

প্রধান পুঁজিবাজারে ১০ কোটি টাকার ওপরে কিন্তু ১৫ কোটি টাকার নিচে পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি রয়েছে ১১টি। কোম্পানিগুলো হলো- রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (১০ কোটি টাকা), জেমিনি সি ফুড (১০ কোটি ৬৪ লাখ), বিডি ল্যাম্পস (১০ কোটি ০২ লাখ), সমতা লেদার (১০ কোটি ৩২ লাখ), ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক (১০ কোটি ৯২ লাখ), এপেক্স ফুটওয়্যার (১৪ কোটি ৩০ লাখ), মেঘনা পেট (১২ কোটি), বাটা সু (১৩ কোটি ৬৮ লাখ), স্টাইলক্রাফ্ট (১৩ কোটি ৮৮ লাখ), ফাইন ফুডস (১৩ কোটি ৯৭ লাখ) এবং ওয়াটা কেমিক্যাল (১৪ কোটি ৮২ লাখ)।

পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ২০ কোটি টাকার নিচে এমন কোম্পানি ১০টি। সেগুলো হচ্ছে- ইউনিলিভার কনজিউমার (১৯ কোটি ২৭ লাখ), লিন্ডে বিডি (১৫ কোটি ২১ লাখ), এপেক্স ট্যানারি (১৫ কোটি ২৪ লাখ), মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক (১৬ কোটি), প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স (১৬ কোটি ৬৪ লাখ), উসমানিয়া গ্লাস (১৭ কোটি ৪১ লাখ), আনলিমা ইয়ার্ন (১৭ কোটি ৮৬ লাখ), সমরিতা হাসপাতাল (২১ কোটি ৮০ লাখ), হাক্কানি পাল্প (১৯ কোটি) এবং রহিমা ফুড (২০ কোটি)।

২০ টাকার বেশি, কিন্তু ৩০ কোটি টাকার নিচে পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি রয়েছে ৭টি। কোম্পানিগুলো হলো- পেপার প্রসেসিং (২৯ কোটি ৬০ লাখ), ওরিয়ন ইনফিউশন (২০ কোটি ৩৬ লাখ), আলহাজ টেক্সটাইল (২২ কোটি ২৯ লাখ), সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল (২৭ কোটি ৭৭ লাখ), এইচআর টেক্সটাইল (২৯ কোটি ২২ লাখ), ইস্টার্ন ক্যাবলস (২৬ কোটি ৪০ লাখ) এবং সোনারগাঁও টেক্সটাইল (২৬ কোটি ৪৬ লাখ)।

এদিকে, পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর মার্কেট এসএমইতে ৩০ কোটি টাকার অধিক মূলধনী কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আছিয়া ফুড (৩৭ কোটি ৩৫ লাখ), এগ্রো অর্গানিকা (৪৩ কোটি ৩০ লাখ), এপেক্স ওয়েভিং (৩৮ কোটি ৮৫ লাখ), বিডি পেইন্টস (৬২ কোটি টাকা), কৃষিবিদ সিড (৩০ কোটি), কৃষিবিদ ফিড (৪৯ কোটি ৫০ লাখ), মামুন এগ্রো (৫০ কোটি), মাস্টার ফিড এগ্রোটেক (৬৭ কোটি ১৫ লাখ), এমকে ফুটওয়্যার (৪৭ কোটি ৮৭ লাখ), মোস্তফা মেটাল (৪৮ কোটি ৮৫ লাখ) এবং ওরিজা এগ্রো (৬৯ কোটি ০৮ লাখ)

৫ উত্তর “নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ ৫৬ কোম্পানি”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.