আজ: বুধবার, ০১ মে ২০২৪ইং, ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৩ মার্চ ২০২৪, বুধবার |

kidarkar

গাজায় অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে: ইইউ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।

এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অভিযোগ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বুধবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বোরেল। তিনি অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে সহায়তার অপ্রতুল প্রবেশকে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

যুদ্ধে জর্জরিত গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের প্রান্তে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য ২০০ টন খাদ্যদ্রব্যবাহী একটি জাহাজ ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দেশ সাইপ্রাস থেকে রওনা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরের দিকে সাইপ্রাসের লারনাকা বন্দর থেকে রওনা দেয় ‘ওপেন আর্মস’ নামের সেই ত্রাণবাহী জাহাজটি।

কিন্তু জাতিসংঘ বলেছে, স্থলপথে সাহায্য বিতরণের বিকল্প হতে পারবে না ওই জাহাজ। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণ গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

এই অঞ্চলে সাহায্য সরবরাহের দ্রুততম ও সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো রাস্তা দিয়ে সহায়তা পাঠানো। কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার মানে হচ্ছে- যে পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন, তার কেবল একটি ভগ্নাংশই সেখানে প্রবেশ করছে।

অর তাই সড়ক পথে সহায়তা পাঠানোর পরিবর্তে সমুদ্র এবং আকাশ থেকে সহায়তা সরঞ্জাম নিচে ফেলার মতো বিকল্প বিভিন্ন পন্থার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, গাজার খাদ্য সংকটের জন্য তারা দায়ী নয় কারণ তারা দক্ষিণে দুটি ক্রসিং দিয়ে সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে।

তবে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, কার্যকর স্থলপথের অভাবের কারণে এই অঞ্চলে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন এমন জনসংখ্যার মুখোমুখি হচ্ছি যারা নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। গাজায় মানবিক সহায়তার প্রয়োজন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সহায়তা সেখানে পাঠাতে যতটা সম্ভব কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘(মানবিক সংকট) মনুষ্যসৃষ্ট এবং যখন আমরা সমুদ্র, আকাশপথে সহায়তা প্রদানের পথ খুঁজি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে, রাস্তার মাধ্যমে সহায়তা প্রদানের প্রাকৃতিক উপায়… কৃত্রিমভাবে বন্ধ।’

জোসেফ বোরেল বলেন, ‘অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং যখন আমরা ইউক্রেনে এই ঘটনার নিন্দা করেছি, তখন গাজায় যা ঘটছে তার জন্যও আমাদের একই শব্দ ব্যবহার করতে হবে।’

এর আগে গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ বা ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে রয়েছে বলে জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি সেসময় সতর্ক করে বলেন, কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে গাজায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ হয়ে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।

ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

এছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত দুই সপ্তাহে সেখানকার হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অন্তত ২৭ জন মারা গেছে। অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় মৃতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.