আজ: সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ মার্চ ২০২৪, শনিবার |

kidarkar

বাংলাদেশি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জলদস্যুদের নতুন দল

নিজস্ব প্রতিবেদক : সোমালিয়ান জলদস্যুদর কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জলদস্যূদের নতুন আরেকটি দল।

জাহাজটি একবার নোঙর করার পর শুক্রবার বিকেলে আবার জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করে জলদস্যূরা।

বৃহস্পতিবার সোমালিয়ার উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করেছিল জাহাজটি। এরপর জলদস্যুদের আগের দল জাহাজ থেকে নেমে পড়ে।

আরও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১৫-২০ জনের নতুন আরেকটি দল জাহাজের দায়িত্ব বুঝে নেয়।

নোঙর তুলে শুক্রবার বিকেলে তারাই জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করতে তাকে নতুন করে। এদের সঙ্গে আছে ইংরেজি জানা একজন ইন্টারপ্রিটারও।

শুক্রবার পর্যন্ত সোমালিয়ার জলদস্যুরা মুক্তিপণ হিসাবে কোনো নির্দিষ্ট অংক দাবি করেনি। এই ব্যাপারে মালিকপেক্ষরও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি তারা।

ধারণা করা হচ্ছে, শিগগির তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে মুক্তিপণের প্রস্তাব পাঠাবে জলদস্যুরা। এদিকে জাহাজটির আবার অবস্থান পরিবর্তনের খবর শুনে আতংক বেড়েছে জিন্মিদের পরিবারে।

উৎকণ্ঠা নিয়ে স্বজনরা ঘটনার কারণ জানতে চাচ্ছেন জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে।

জাহাজের মালিকপক্ষের মুখপাত্র ও কেএসআরএম গুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার জাহাজটি উপকূল থেকে দুই নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করেছিল তারা। এরপর জলদস্যুদের নতুন আরেকটি দল জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।’

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জাহাজটি আবার অবস্থান পাল্টাতে থাকে। জলদস্যুদের কেউ আমাদের সঙ্গে এখনও মুক্তিপণের ব্যাপারে যোগাযোগ করেনি। তবে নাবিকরা সবাই ভালো আছেন। সুস্থ আছেন।’

জাহাজের অবস্থান পরিবর্তনের খবর শুনে আতংক বেড়েছে জিম্মিদের স্বজনদের মনে। এদেরই একজন নাবিক সাজ্জাদের স্ত্রী নাজমিন আকতার নুপুর। জাহাজের অবস্থান পরিবর্তনের খবর পেয়ে মালিকপক্ষের কাছে ফোন করেছেন তিনি।

নাবিকদের শারিরীক অবস্থার খোঁজ খবর জানতে চান তিনি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে খালাতো বোন নাজমিন আকতার নুপুরের সঙ্গে বিয়ে হয় সাজ্জাদ হোসেনের।

কাবিননামা হওয়ার পরদিনই জাহাজে উঠেন নাবিক সাজ্জাদ হোসেন। কথা ছিল ফিরে এসে জাঁকজমক আয়োজনে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।

কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ জাহাজের নাবিক সাজ্জাদ হোসেনের। ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে এখন জিন্মি হয়ে আছে সে। কবে নাগাদ মুক্তি মিলবে তা জানেন না সাজ্জাদের নব বিবাহিতা স্ত্রী নুপুরও।

চোখে অশ্রু মুখে উদ্বেগ নিয়ে সাজ্জাদ হোসেনের বড় ভাই মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে আমার হোয়াটসঅ্যাপে একটি অডিও বার্তা পাঠায় সাজ্জাদ। সেখানে সে নুপুরকে দেখে রাখতে বলে। মা-বাবাকে তার জন্য দোয়া করতে বলে।

তিনি বলেন, ‘বুধবার সারা দিন চেষ্টা করেও ভাইয়ের সঙ্গে আর কোনো কথা বলতে পরিনি। সব যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছে জলদস্যুরা।’

এদিকে সাজ্জাদের বাবা গাজু মিয়া ও মা শমসেদ বেগম হাউমাউ করে কাঁদছেন। কাবিননামায় আবদ্ধ হওয়া নাজমিন আকতার নুপুর দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন। সাজ্জাদ হোসেন ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের ৫০তম ব্যাচের ক্যাডেট। তাকে মুক্ত করতে বাবা গাজু মিয়া ছুটে এসেছিলেন নগরের আগ্রাবাদে কেএসআরএম অফিসের সামনে। অশ্রুসজল চোখে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে ফেরত দিন। আমার বুকে ফেরত দিন।’

শুধু সাজ্জাদ নন; জিন্মি হওয়া আরও ২২ নাবিক ও তাদের স্বজনরাও আছেন চরম উদ্বেগে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর একটার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।

এর পর সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাত্রা শুররু করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূলে পৌঁছেছে কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল।

সেই জাহাজের নাম এমভি জাহান মণি। বড় অংকের মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী।

জাহাজে জিম্মি অবস্থায় থাকা নাবিকরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মো. শামসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.