আজ: শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ মার্চ ২০২৪, রবিবার |

kidarkar

কবি শামসুল ইসলামের ৮২তম জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা একাডেমি পুরষ্কার বিজয়ী নিভৃতচারী ও ধ্রুপদী কবি শামসুল ইসলামের জন্মদিন ১৭ মার্চ।

১৯৪২ সালের এইদিনে তিনি ফেনীর ফুলগাজীর দক্ষিণ ধর্মপুরের মুন্সী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি বাংলাদেশ বেতারের (রেডিও বাংলাদেশ) উধ্বর্তন কর্মকতা ছিলেন। কাজ করেছেন জার্মান রেডিওতে। তারপর দৈনিক বাংলারবাণী ও দৈনিক দেশবাংলা`র ফিচার ও সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন।

২০০৭ সালের ২৭ জুন কবিদের কবিখ্যাত শামসুল ইসলাম রাজধানীর মোমেনবাগের বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ষাট দশকের অন্যতম প্রধান এই কবি’কে কোনক্রমেই ভুলে যাওয়া সম্ভব না- তাঁর বহুবিধ এবং স্বতন্ত্রবোধের জন্য।

ফেনীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার জন্যে তাঁকে সবাই ভাইছাব বলে ডাকতেন। কবি শামসুল ইসলাম তাঁর মত করে সাহিত্য সাধনা করে গেছেন। তাঁর সাহিত্য রচনায় বিশেষ করে কবিতা ও ছড়ায় এমন সব শব্দ প্রয়োগ করেছেন যা তাঁর সমসাময়িক কোন কবির কবিতায় আমরা দেখিনি। শব্দগুলো যেমন বৈচিত্র্যময় তেমনি সেসব শব্দের আভিধানিক অর্থও খুব তাৎপর্যময়। যেমন- তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘জলৌকা হে নীল যমুনা’ কি সুন্দর নাম। অর্থটা আরও হৃদয়গ্রাহী। জলৌকা শব্দের অর্থ ‘জোক’, নির্মম জোকের হৃদয়হীন শোষণকে তিনি

বাংলাদেশের সমূহ বিনষ্টের প্রতীকি হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

তাঁর আরও কিছু কাব্যগ্রন্থের নাম- ‘কালনেমিকাল’, ‘এক প্রেমিতে আলকেমিতে’ ‘নষ্টা চন্দ্রার চাঁদ’, ‘কনে সুন্দরী আলো’, ‘চির বিরিঞ্চির তরু’, ‘লোহল নুলিয়া’, ‘হিছাইকার ও অন্যান্য পদ্য’ প্রভৃতি ।

তাঁর দু’চারটি কাব্যগ্রন্থের সংক্ষিপ্ত আলোচনা-

কালনেমিকাল : কালনেমি হচ্ছে রাক্ষসরাজ রাবণের মামা, যে যুদ্ধ জয় ছাড়াই মনে-মনে লংকা ভাগ করেছিলো। রাক্ষসরাজ তাকে যে কাজ দিয়েছিলো তা সমাধার আগেই লংকার কোন অর্ধেক তার হবে তা স্থির করে ফেলেছিল, কিন্তু কালনেমির সে বাসনা পুর্ন হয়নি। রামায়ণের সেই কালনেমিকে কবি শামসুল ইসলাম প্রতীকি ব্যঞ্জনায় বর্তমান যুগ ও জীবনের সীমাহীন অপ্রাপ্তি ও অতলান্ত বিড়ম্বনার চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন এ নামকরণের মাধ্যমে ।

চির বিরিঞ্চির তরু : বিরিঞ্চি শব্দের অর্থ ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু,শিব। আর চির অর্থ অনন্তকাল, তরু অর্থ বৃক্ষ। অতএব, পুরো অর্থ দাঁড়ায় নিত্য ব্রক্ষ্মার বৃক্ষ।

লোহল নুলিয়া : এখানে লোহল শব্দের অর্থ লোভী, লোলুপ ইত্যাদি। আর নুলিয়া শব্দের অর্থ হলো পুরী’র সমুদ্র তীরে বসবাসরত মৎস্যজীবী জাতি বিশেষ- যারা সমুদ্র স্নানার্থীদের সহায়তা করে থাকে। এখানে পুরো অর্থ দাঁড়ায় ললুপ ধীবর বা লোভী জালিক।

হিচহাইকার : এই শব্দটির অর্থ হচ্ছে, বিনা টিকেটে মোটর বা লরীতে ভ্রমণকারী অর্থাৎ উড়নচণ্ডী যাত্রী । কবি চাল-চুলোহীন ভবঘুরে বাউন্ডুলে অর্থে শব্দটি প্রয়োগ করেছেন । শব্দ প্রয়োগ কবি শামসুল ইসলাম সহজে আয়ত্তে আনতে পেরেছিলেন। সঠিক জায়গায় ব্যবহার করেও দেখিয়েছেন। তাঁর সমসাময়িক আর কোন কবি সাহিত্যিক এমন ব্যঞ্জনাময় শব্দ ব্যবহার করেছেন কিনা মনে পড়েনা।

এতবড় মাপের কবি তিনি অথচ কখনোই তাঁর মনে কোন অহংকারবোধ কাজ করতে দেখিনি। কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, কটুকথা বলেছেন বলে শুনিনি। তাঁর আচার- আচরণ, আন্তরিকতা এতটা আপন করে নেয়ার মত ছিলো যে একবার তাঁর সান্ন্যিধ্যে যিনি এসেছেন তিনি কবি শামসুল ইসলামকে ভুলতে পারবেন না।

কবি শামসুল ইসলামের জন্মদিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তাঁর জন্যে রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.