আজ: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

এবার একীভূত হচ্ছে আরও চার ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংক অন্য দুটি ব্যাংকের সাথে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। ব্যাংক দুটি হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল। আর কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাকাব। একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বুধবার সরকারি ব্যাংক চারটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে আলাদা সভা করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাছের ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগির ব্যাংকগুলো একীভূত করার বিষয়ে নীতিমালা দেবে। এরপর নীতিমালা মেনে নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারপর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সংবাদমাধ্যমকে জানান, দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার বিষয় ধারাবাহিক মিটিং হচ্ছে। গতকালও মিটিং ছিল, অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন হলে আমরা জানাব। এর বেশি কিছু বলা যাবে না বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র।

অনিয়ম-জালিয়াতিতে সংকটে পড়া পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) শ‌রীয়াহভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয় ঘোষণা দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গত ২৫ মার্চ বেসরকারি খাতের এ দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের পর সরকারি খাতের দুই ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে সরকারি দুর্বল দুই ব্যাংককে সরকারি মালিকানাধীন অপর দুটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেহেতু সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি ব্যাংককে একীভূত করা হবে, তাই রাকাব ও বিডিবিএল ব্যাংকের কর্মীদের চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

জানা যায়, ১৯৭৩ সালে কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। আর ১৯৮৬ সালে উত্তরাঞ্চলের কৃষি ব্যাংকের শাখাগুলো নিয়ে গঠন করা হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এখন আবার দুটি ব্যাংককে এক করে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিতরণ করা ৩১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির খেলাপির হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।

এ ছাড়া গত ডিসেম্বর শেষে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস) একীভূত হয়ে বিডিবিএল ব্যাংক নামে যাত্রা শুরু করে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৪২ শতাংশই ছিল খেলাপি। এ সময় পর্যন্ত বিডিবিএলের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৯৮২ কোটি টাকা। আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ৯৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

গতকালের সভায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংককে জানানো হয়, যে দুটি ব্যাংককে একীভূত করা হবে, তাদের খারাপ সম্পদ বা মন্দ ঋণ কিনে নেবে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি। এরপর শুধু ভালো সম্পদ নিয়ে ব্যাংক দুটিকে একীভূত করা হবে। এতে চাপে পড়বে না ভালো ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিডিবিএল, রাকাবের পর  রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংকও একীভূত করার আলোচনায় আছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানার আরেক বড় ব্যাংক অগ্রণীর সঙ্গে বেসিককে একীভূত করা হতে পারে। সরকারি ব্যাংকের বাইরে সমস্যাগ্রস্ত পদ্মা ছাড়াও বেসরকারি খাতের আরও ৮টি ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনা রয়েছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে জানান, আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হ‌বে। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত (মার্জার) করতে একটি রোডম্যাপ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কানেক্টিং অ্যাকশন’ বা পিসিএ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচক ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সেই সূচকে কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোকে ‘দুর্বল’ শ্রেণিভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংক টেনে তোলার শেষ পদক্ষেপ হিসেবে অন্য ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়টি আসবে। সরকারও তাতে সায় দিয়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.