আজ: শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ইং, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার |

kidarkar

সোনালী লাইফের বোর্ড স্থগিত, নতুন প্রশাসক নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

গত ১৮ এপ্রিল আইডিআরএ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। যা আজ রোববার (২১ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে

প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ফেরদৌস, এনডিসি, পিএসসিকে।

প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহণের পর যতদ্রুত সম্ভব কোম্পানিটিতে দেশি বা বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে একটি পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা সম্পন্ন করবে। এ ছাড়াও বীমা পলিসি ইস্যুসহ কোম্পানির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন প্রশাসক।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল এক চিঠিতে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে কেন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে না তার ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। ৫ কার্য দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ১৮ এপ্রিল কর্তৃপক্ষে আয়োজিত এই সংক্রান্ত শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

আইডিআরএ’র নির্দেশনা মোতাবেক, ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শুনানিতে অংশ নেন সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। তবে এর আগের দিন ১৭ এপ্রিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ৩ জন পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরা হলেন- আহমেদ রাজিব সামদানী, হুদা আলী সেলিম ও হাজেরা হোসেন।

প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিলের শুনানিতে কোম্পানির পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান নূর-এ হাফজা পৃথকভাবে জবাব দাখিল করেন। আর বোর্ডের পক্ষে জবাব দাখির করেন কোম্পানিটির বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী মনিরুজ্জামান।

কাজী মনিরুজ্জামানের জবাবে বলা হয়, কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিজে ও তার পরিবারের অনুকূলে ইস্যুকৃত শেয়ারের মূল্য, মাসিক বেতন গ্রহণ, তার নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ প্রদান, বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ব্যয় বাবদ অর্থ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস দাবি করেন- সোনালী লাইফের কাছে তার পাওনা ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৩০৫ টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত অফিস ভাড়া বাবদ ১১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮শ’ টাকা, অফিস ভাড়ার বিলম্ব ফি বাবদ পাওনা ২৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৬ টাকা, কোম্পানিকে ঋণ দেয়া বাবদ পাওনা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৪২ টাকা তিনি গ্রহণ করেছেন।

তবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের এই দাবির সাথে কোম্পানির বুক অব একাউন্টস, লেজার সিস্টেম জেনারেটেট ভাউচার, ব্যাংকের এডভাইস চেক ইত্যাদি ডকুমেন্টেসের সাথে কোন মিল না থাকায় তার এই বক্তব্য গ্রহণ করা হয়নি আইডিআরএ’র শুনানিতে।

মূলত কোম্পানির টাকায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিপুল ব্যয় বহন, নগদ গ্রহণ ও নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি উদঘাটিত হওয়ার পর তা ভাড়া হিসেবে গ্রহণের দাবি করা হয়েছে।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ভাড়ার টাকা সমন্বয় করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য না হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে- ২০১৩ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বছরভিত্তিক ফ্লোর এরিয়ার চাহিদা নির্ধারণ করে মোট ১৮৪ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৮শ’ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে ২০১৩ সালে চুক্তি সম্পাদন করা হয়।

তবে ভাড়ার ওই চুক্তিতে কোম্পানির পক্ষে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করেননি। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ভবন মালিক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের জামাতা ও সোনালী লাইফের স্পন্সর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল। এ ধরণের চুক্তি স্বাক্ষরকে আইডিআরএ অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও অপকৌশল বলে মনে করছে।

অপরদিকে নূর-এ হাফজা তার জবাবে বলেন, তার নামে ইস্যুকতৃ প্লেসমেন্ট শেয়ারের মূল্য তিনি পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। এছাড়া তিনি কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন তা পরিশোধ করতে ইচ্ছুক বলেও জানান।

আইডিআরএ বলছে,অসম্পূর্ণ ডেটা স্টোরেজ বা তথ্য গোপন করা, অ-স্বচ্ছ অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, নগদ চেকে বড় লেনদেন, জামানত হিসাবে এফডিআর সহ বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ নেওয়া এবং সিইও সহ কোম্পানির প্রায় সমস্ত ব্যাংক স্বাক্ষরকারী সদস্য। একই পরিবারের।

এমতাবস্থায় সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ এমনভাবে বীমা কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করছে যাতে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে কোম্পানি ও বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।

এর আগে, সোনালী লাইফের অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগ তদন্তের জন্য অডিট ফার্ম হুদাবাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩-এ নিরীক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছিল। অডিট ইনস্টিটিউটের তদন্তে ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.