আজ: শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ইং, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার |

kidarkar

গ্রেফতার হতে পারেন কারিগরির সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর

শেয়ারবাজার ডেস্ক : বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান সার্টিফিকেট বাণিজ্যের বিষয়ে সঠিক জবাব দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) প্রায় তিন ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবিপ্রধান সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সার্টিফিকেট বাণিজ্যে সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। তাকে আগামী দুদিন নজরদারিতে রাখা হবে। এর মধ্যে বুয়েটের স্পেশালিস্ট এসে দেখবে, তারা এখন পর্যন্ত কতগুলো সার্টিফিকেট বিক্রি করেছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১ এপ্রিল আমরা রাজধানীর পাইকপাড়ায় সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানের বাসায় অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে সার্টিফিকেট তৈরির কারখানা করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে কী করে হাজার হাজার কাগজ জালিয়াতি করেছেন।

এই সনদ জালিয়াতির ঘটনায় আমরা ৬ জনকে গ্রেফতার করেছি। এরমধ্যে ৫ জন দোষ স্বীকার করেছে। আর কারা কারা জড়িত ও দায় রয়েছে, সে সম্পর্কে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। শামসুজ্জামান ও কারিগরির চেয়ারম্যানের স্ত্রী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আজকে আমরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

আমরা জানতে চেয়েছি, সার্টিফিকেট চুরি করার পর ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপলোড করা সনদ অনিয়ম করা হয়েছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস! কীভাবে? তিনি একজন চেয়ারম্যান। তিনি নির্দেশনা দেন। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ নিয়ে যাচ্ছে, সিসি ক্যামেরা আছে, তারা দেখছেন। এই জালিয়াতি হলো!

আবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেটগুলোতে স্বাক্ষর করে গেছেন মাসের পর মাস। কলেজগুলোর পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করা হয়। কিন্তু তিনি সেটি করেননি।

হারুন বলেন, এ ঘটনাগুলো কী অবহেলায়, চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক করেছেন? নাকি স্বপ্রণোদিতভাবে করেছেন তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কেন জেনেও আপনারা ব্যবস্থা নিলেন না? তখন চেয়ারম্যান ডিবিকে বলেছেন, আমাদের লোকবল কম ছিল। নজরদারি সম্ভব হয়নি।

ডিবিপ্রধান বলেন, কিন্তু প্রশ্ন হলো, সার্টিফিকেট কেনাবেচা হচ্ছে, সার্টিফিকেট বানানোর পর কারিগরির সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোড হচ্ছে। জানার পরও এসব হলে দায় এড়াতে পারেন কি না?

তখন চেয়ারম্যান বলেন, সেই দায় ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত? অবহেলা নাকি বায়াস্ট? স্ত্রীর বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। জানতেন না দাবি করেছেন।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নজিরবিহীন জাল-জালিয়াতির ঘটনা ইতিহাসে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কিত ও কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করার মতো ঘটনা৷

‌‘আমি মনে করে, কারিগরির চেয়ারম্যান দায় এড়াতে পারেন না। কোনো সুযোগ নেই। আমরা এখন দেখবো, তিনি আসলে সনদ বিক্রির বিষয়টি জানতেন কি না? তার তো জানার কথা? তিনি সার্টিফিকেট বিক্রির মাধ্যমে শিক্ষা ও জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন। তিনি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন, তার জানার কথা, একটা মানুষ কত পরিশ্রম করেও ভালো রেজাল্ট করতে পারছে না, সেখানে পড়াশোনা না করেই টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কিনে নিচ্ছে। এটা কাঙ্ক্ষিত না।’

তিনি বলেন, সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তার দায় সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। প্রয়োজনে তাকে এক-দুদিনের সময় দেবো। তিনি যদি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন আর আমরা যদি তার সংশ্লিষ্টতা বা অনৈতিক যোগসাজশের তথ্য-প্রমাণ পাই, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

হারুন অর রশীদ বলেন, পরীক্ষার হলে নকল প্রতিরোধে আমরা কাজ করেছি, অপরাধী চক্রকে গ্রেফতার করেছি। অথচ দুঃখজনক হলো, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, তার পরিবার, সিস্টেম অ্যানালিস্ট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিলে সিন্ডিকেট বানিয়ে যেভাবে প্রতারণা, সনদ জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এটা আসলে কাম্য হতে পারে না, তাই জড়িত প্রত্যেককে আমরা একে একে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। কাউকে ছাড় দেবো না।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.