আজ: বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ইং, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার |

kidarkar

শুরু হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উদ্যোক্তা ভিক্তিক শো ‘শার্ক ট্যাংক’

নিজের প্রতিবেদক: বাংলাদেশের কন্টেন্টশিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা করলো ‘শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ’। ২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই বিশ্বখ্যাত রিয়ালিটি শো। বহুল প্রত্যাশিত এই শো-টি সারা দেশে বিনোদন, জ্ঞান প্রদান, উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের সুযোগগুলোকে আলোকিত করতে সফল হয়েছে। দর্শকরা প্রতি শুক্রবার রাত ১০ টায় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ এবং দীপ্ত টিভি-তে এর পর্বগুলো দেখতে পারবেন। এছাড়া, যেকোন সময় বঙ্গতে স্ট্রিমিং করেও শো’টি দেখা যাবে।

‘শার্ক ট্যাংক’ সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসায়িক ধারণা বিনিয়োগকারীদের একটি প্যানেলের কাছে উপস্থাপন করতে দেয়, যারা ‘শার্ক’ হিসেবে পরিচিত। তারা বিজনেসটিকে পছন্দ করলে উদ্যোক্তাদের সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান করেন। কোন উদ্যোক্তার কাছে যদি একটি নতুন পণ্যের প্রোটোটাইপ অথবা একটি বিদ্যমান পণ্য বা পরিষেবা, অথবা ব্যবসা বৃদ্ধির পরিকল্পনা থাকে তাহলে তাদের ধারণায় বিনিয়োগ করার জন্য পাঁচজন ‘শার্ক’ কে রাজি করাতে হবে।

২০০১ সালে জাপানে নিপ্পন টিভিতে ‘মানি টাইগারস’ হিসাবে চালু হওয়ার পর থেকে এই ফরম্যাটটি বিশ্বব্যাপি সাফল্য পায় এবং প্রতিটি মহাদেশে কখনো ‘ড্রাগন’স ডেন’, কখনো ‘লায়নস ডেন’ সহ বিভিন্ন নামে অনুষ্ঠিত হয়। ‘শার্ক ট্যাংক’-এর এই ফরম্যাটে ড্রাগন, লায়নস কিংবা শার্ক নামে উক্ত দেশের বিভিন্ন সফল উদ্যোক্তারা প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, যা কয়েক ডজন কোম্পানিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে সক্ষম করেছে। ‘শার্ক’ ইকোসিস্টেমে যোগদানকারী উদ্যোক্তারা ব্যাপক প্রবৃদ্ধি দেখেছেন। ডিল পাওয়ার পরে এবং শো-তে প্রদর্শিত হওয়ার পরে বিলিয়ন ডলারের সেল তৈরি করেছেন।

‘শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ’-এর প্রথম পর্বে ১ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করা হয়, যেখানে এসেছিলেন চারজন সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা এবং তাদের প্রত্যেকেই তাদের নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধারণাগুলি শার্কদের সামনে তুলে ধরেন। এই পর্বে শার্কদের মধ্যে ছিলেন সামি আহমেদ, নাজিম ফারহান চৌধুরী, নাভিন আহমেদ, আহমেদ আলী (লিয়ন) এবং গোলাম মুর্শেদ।

শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ-এর উদ্যোক্তা যাত্রা:

বুকশনারি
শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ-এর প্রথম পর্বে সবার প্রথমে উপস্থিত হয় ভিন্নধর্মী এক বইয়ের ব্যবসা। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা আর টেকনোলজির মিশেলে তৈরি এই ব্র্যান্ডের নাম ‘বুকশনারি’। এই ব্যবসার উদ্যোক্তার নাম মেহেদী হাসান নয়ন। তার উপস্থাপনায় তিনি একটি গেম-চেঞ্জিং ধারণা উপস্থাপন করেন। মেহেদী ‘বুকশনারি’ নামে একটি প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম চালু করেছেন যেখানে বইপড়ুয়ারা বই কেনার, বিক্রি করার এবং বিনিময় করার সুযোগ পাবেন।

বুকশনারির লক্ষ্য এদেশের বই বিক্রির তথাগত প্রথাকে পালটে ফেলার। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে, এই প্ল্যাটফর্মটিকে মানুষের বই সংগ্রহের এক সেরা মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এর উদ্যোক্তা।

মেহেদীর উপস্থাপনা শার্ক নাজিম ফারহান চৌধুরী এবং সামি আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যারা বুকশনারির রূপান্তরকারী সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেন। এই চুক্তিতে, শার্ক নাজিম ফারহান চৌধুরী এবং সামি আহমেদ ১৫% অংশীদারিত্বের বিনিময়ে ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন।

কুকলি
শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ-এর দ্বিতীয় ব্যবসা নিয়ে আসেন নারী উদ্যোক্তা শায়লা শারমিন। রান্নাবান্নার প্রতি ভালোবাসা ও এক যুগান্তকারী আইডিয়া নিয়ে শায়লা শুরু করেছেন এক ভিন্নরকম বিজনেস ‘কুকলি’।

সহজেই রান্না করা যায় এমন কিছু রেডিমিক্স নিয়ে তার ব্যবসা ইতোমধ্যেই অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তার এই পণ্যে তিনি ব্যবহার করেন না কোনো প্রিজার্ভেটিভ কিংবা কেমিকেল। সম্পূর্ণ অর্গানিক উপকরণ দিয়ে তৈরি এই পণ্যগুলো শার্কদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। বিশেষ করে তার ‘সুগার ফ্রি মাসালা টি মিক্স’ পণ্যটি। তাই শার্ক গোলাম মুর্শেদ, নাজিম ফারহান চৌধুরী এবং আহমেদ আলী ৪০% ইক্যুইটি অংশীদারিত্বের বিনিময়ে ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন উদ্ভাবনী এই বিজনেসে।

ইকোকাটলার
সমস্যা থেকেই তৈরি হয় সমাধান। আর সেই সমাধানকে ব্যবসায় পরিণত করাই হচ্ছে এক সফল উদ্যোক্তার কাজ। এমনই একজন দূরদর্শী হলেন মো. আজিজুল হক, ইকোকাটলারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশের প্রথম পর্বে তৃতীয় উদ্যোক্তা আজিজুল হক পরিবেশ-বান্ধব কাঠ ও বাঁশের তৈরি কাটলারি এবং স্ট্র-এর একটি বিজনেস ‘ইকোকাটলার’ নিয়ে আসেন।
ইকোকাটলারের মিশনটি শার্কদের সাথে গভীরভাবে অনুরণিত করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ইকোকাটলার এই রাউন্ডে কোনও চুক্তি করতে পারেনি।

বিউটি সলিউশন
এরপর নিজের তৈরি স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড নিয়ে আসেন ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারী উদ্যোক্তা নাজনিন আকতার ডালিয়া। ত্বকের যত্নে অর্গানিক উপকরণের উপর অগাধ বিশ্বাসী এই উদ্যোক্তার ব্যবসার নাম ‘বিউটি সল্যুশন’। বিভিন্ন ধরণের স্কিন কেয়ার সামগ্রী আছে এই ব্যবসাতে। বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অগণিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে বিউটি সলিউশন সমৃদ্ধ হয়েছে। ত্বকের যত্নে ভেষজ উপকরণের প্রতি উদ্যোক্তা ডালিয়ার একনিষ্টতা শার্কদের মন জয় করে। তাই সম্মানিত শার্ক গোলাম মুর্শেদ, সামি আহমেদ এবং আহমেদ আলী একসঙ্গে ৮% ইক্যুইটি অংশীদারিত্বের বিনিময়ে ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এটি ছিলো এই পর্বের সবচেয়ে কঠিন ডিল।

এই বিশ্ব বিখ্যাত শো-এর “টাইটেল স্পন্সর” হিসেবে রবি, “পাওয়ারড বাই স্পন্সর” হিসেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ, “কো-স্পন্সর” হিসেবে ট্যালি সলুশনস, “ব্যাংকিং পার্টনার” হিসেবে প্রাইম ব্যাংক, “স্ন্যাকস পার্টনার” হিসেবে অলিম্পিক ফুডি ইন্সট্যান্ট নুডলস, “বেভারেজ পার্টনার” হিসেবে সানকুইক, “ওয়ারড্রোব পার্টনার” হিসেবে ইয়োলো বাই বেক্সিমকো, “স্টাইল পার্টনার” হিসেবে ক্লথ স্টুডিও, “গিফট পার্টনার” হিসেবে মিনিসো, “হসপিটালিটি পার্টনার” হিসেবে হলিডে ইন, “সিকিউরিটি পার্টনার” হিসেবে ইউরো ভিজিল সিকিউরিটি সার্ভিস, “ফটোগ্রাফি পার্টনার” হিসেবে র এক্সপোজার, “ব্যাক স্টোরি পার্টনার” হিসেবে লাইভ টু ওয়েব, “রেস্টুরেন্ট পার্টনার” হিসেবে চাওস এবং “পিআর পার্টনার” হিসেবে রয়েছে কনসিটো। অনুষ্ঠানটি প্রোডাকশনের দায়িত্বে ছিলো রেড ডট কমিউনিকেশন।

শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ-এর প্রতি পর্ব প্রতি শুক্রবার রাত ১০টায় একসাথে সম্প্রচারিত হবে বঙ্গ প্ল্যাটফর্ম ও দীপ্ত টিভিতে। এছাড়া যেকোনো সময় পর্বগুলো দেখা যাবে বঙ্গ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.