আজ: রবিবার, ১২ মে ২০২৪ইং, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার |

kidarkar

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও আর্থিক প্রণোদনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিদ্যমান আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার পরামর্শে দেশের রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সরকারি চ্যানেলে আনতে সরকার এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

সাধারণত, একটি দেশকে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ বজায় রাখতে হয়। সারা বিশ্বে নানা ধরনের সংকট চলছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় অংশ আসে পোশাক রপ্তানি খাত থেকে। এরপর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিটেন্স থেকে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে নানা জটিলতা এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ তাদের কব্জায়। এই অবস্থায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নতুন করে কী কী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

গত ২৪ এপ্রিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর থেকে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত প্রায় তিন দশক ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকার ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময়ে গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার।

একই সময়ে গড়ে প্রতি বছর প্রবাস আয় এসেছে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, এ সময়ে প্রতি বছর গড় আমদানি মূল্যের ৩৪.৩ শতাংশের সমপরিমাণ অংশই প্রবাসী আয় দিয়ে মেটানো হয়েছে।

এভাবে ধারাবাহিক উন্নতির ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেয়ে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ১০.৯৯ বিলিয়ন ডলার।

ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বে সব দেশের মধ্যে নবম প্রবাস আয় গ্রহণকারী দেশে উন্নীত হয়েছে। প্রবাস আয়ের এ বিপুল প্রবাহ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালীকরণেও ভূমিকা রাখছে।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহকে আরও উৎসাহিত করতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথমবারের মত ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা পরবর্তীতে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়।

অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সুচিন্তিত এই নীতি-কৌশল অবলম্বনের ফলশ্রুতিতে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রকোপ সত্বেও ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় অর্জিত হয়। ওই বছর বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবাসী আয় প্রথমবারের মত ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বিগত তিন অর্থবছর ধরে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আয়ের প্রবৃদ্ধিও ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

অবৈধ পথে প্রবাসী আয় প্রেরণ তথা হুন্ডির প্রবণতা রোধের জন্য আর্থিক প্রণোদনা বা ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া হলেও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কারণ, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা আরও উচ্চহার প্রদান করে থাকে।

এই প্রেক্ষিতে প্রবাসী আয় পাঠানোদের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদানের সঙ্গে নন-ফাইনান্সিয়াল সুবিধা প্রদান করলে তা আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

এই বিষয়ে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমজীবী মানুষের কষ্টার্জিত বৈদেশিক আয় বৈধ উপায়ে দেশে প্রত্যাবাসন উৎসাহিত করার জন্য সরকার কর্তৃক বর্তমানে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।

২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রণোদনার হার ছিল ২ শতাংশ। ২০১৯-২০ ২৬৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ব্যয় ছিল ৪০৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে রেমিট্যান্স প্রণোদনার হার বৃদ্ধি করে ২.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমানে অব্যাহত আছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এখাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

বৈধ উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ভিতকে শক্তিশালী করার জন্য বর্তমানে দেওয়া হারে রেমিট্যান্স প্রণোদনা অব্যাহত রাখা যেতে পারে।

এ ছাড়া, বিদেশ থেকে বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করার জন্য অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল যে সব সুপারিশ করেছে সেগুলো হচ্ছে:

সেরা রেমিটেন্স পুরস্কার দেওয়া হতে পারে; রেমিটেন্স প্রেরকদের সন্তানদের জন্য সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে; রেমিট্যান্স প্রেরণকারী বাংলাদেশীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন ফি কমানো হতে পারে।

এছাড়া রেমিট্যান্স প্রেরণ ও গ্রহণের কাজে জড়িত ব্যাংক/এক্সচেঞ্জ হাউসের শাখাগুলোকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খোলা রাখা, বিশেষ করে উৎসবকালীন লম্বা ছুটি থাকার সময়ে খোলা রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ; পাসপোর্টসহ দূতাবাসে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স কার্ডধারীদের অগ্রাধিকার প্রদান; রেমিট্যান্সপ্রাপ্তি সহজীকরণ (ডকুমেন্টেশন হ্রাসসহ); বিদেশে বাংলাদেশি মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউস/ব্যাংকে বাংলা ভাষী কর্মকর্তা নিয়োগ এবং প্রবাসীদের জন্য সরকারের সেবাসমূহের প্রচার করা।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.