আজ: সোমবার, ২০ মে ২০২৪ইং, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ মে ২০২৪, বুধবার |

kidarkar

পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি : প্রধানমন্ত্রী

শেয়ারবাজার ডেস্ক : জাতীয় সংসদে জনগণের ওপর থেকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব কমাতে বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ লক্ষ্যে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি।

বুধবার (৮ মে) সংসদে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালামের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ লক্ষ্যে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। তবে বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে এ সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতেও আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে নেওয়া পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে ওএমএস খাতে ৪ লাখ টন চালের সংস্থান রয়েছে। চাল ও আটার বাজারমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বর্তমানে ওএমএস কর্মসূচিতে সারা দেশে সর্বমোট ৮৭১টি কেন্দ্রে দৈনিক মোট ৮৬৯ টন চাল এবং ১ হাজার ১০১ টন করে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ওএমএস (সাধারণ) খাতে প্রায় ১.৬৭ লাখ টন চাল এবং ২.১৩ লাখ টন আটা বিক্রি করা হয়েছে।

‘এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে ১ কোটি পরিবারের মধ্যে ৫ কেজি করে প্রতি মাসে মোট ৫০ হাজার টন চাল বিতরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় চালের পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে ২ কেজি ডাল ও ২ কেজি সয়াবিন তেলও বিতরণ করা হচ্ছে।’

সরকার প্রধান জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের ৫০ লাখ পরিবারকে বছরে কর্মাভাবকালীন ৫ মাস (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল) ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করে নিয়মিত খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির আওতায় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও জেলা শহরগুলোতে ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএস চাল বিক্রি করা হচ্ছে। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশে অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে খাদ্য শস্য সংগ্রহের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২.১৯ লাখ টন।

‘এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকি ও প্রণোদনা হিসেবে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কৃষি খাতে প্রদত্ত ভর্তুকি ও প্রণোদনা কৃষকের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পরোক্ষভাবে কৃষিজাত পণ্যের মূল্য নিম্নমুখী রাখতে সহায়ক হয়েছে। ডাল, তেল, মসলা, ভুট্টাসহ ২৪টি ফসল উৎপাদনের জন্য সুদ ভর্তুকির আওতায় বিদ্যমান ৪ শতাংশ সুদে বিশেষ কৃষিঋণ দেওয়া হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের ২৯ শতাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৬.৫৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন শুল্কছাড় দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজারদর স্থিতিশীল রাখা ও অবৈধ মজুতদারি কঠোরভাবে দমনের জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতি (রেপো) সুদহার দফায় দফায় বাড়িয়ে মে ২০২২ এর ৪.৭৫ শতাংশ থেকে সর্বশেষ ৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফেসিলিটি (এসডিএফ বা রিভার্স রেপো রেট) বৃদ্ধি করে ৬.৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। নীতি সুদহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি করায় বাজারভিত্তিক গড় সুদ হারে দৃশ্যমান ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তন এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টাকার বিনিময় হারের সাম্প্রতিক পতন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে শিগগিরই ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.