আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ মে ২০২৪, মঙ্গলবার |

kidarkar

পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে শত কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতি

শত কোটি টাকার মালিক প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের অগ্রাধিকার ও জনসেবার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে। সরকার কোটি কোটি টাকা ভূর্তুকি দিয়ে হলেও রেলওয়েকে জন মানুষের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। কিন্তু কতিপয় লুটেরা কর্মকর্তা সরকারের সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে। এসব দুর্ণীতিবাজরা লুটে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা। লুটেরা সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা লুটেরা সিন্ডিকেট শত শত কোটি টাকার টেন্ডার অনিয়ম করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন।

রেল বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন রেলের সাবেক মন্ত্রী এবং সাবেক ডিজি কামরুল ইসলামকে ১ কোটি করে মোট ২ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ফরিদপুরের সন্তান আবু জাফর ২ বছর আগে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে বদলী হয়ে আসেন। তিনি তাঁর বিনিয়োগের টাকা উত্তোলনের জন্য তার অধীনে একটা লুটপাট সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তার এ বলয়ে রয়েছেন ঢাকার ডিএন ০১ নড়াইলের ফেরদৌস, ডিএন ০৩ মাহমুদুল হক (মি: ১০% নামে পরিচিত) , চট্টগ্রামের ডিভিশনাল প্রকৌশলী ০১ আবু হানিফ, ডিভিশনাল প্রকৌশলী ০২ রফিকুল ইসলাম, ডিভিশনাল ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম (শিবির সাইফুল নামে পরিচিত) সহ একটি শক্তিশালী চক্র যারা শত শত কোটি টাকার টেন্ডার জালিয়াতিতে জড়িত।

এর মধ্যে ঢাকার ডিভিশনাল প্রকৌশলী ০৩ মাহমুদুল হক সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত। তার দপ্তরের সকল কাজের কার্যাদেশই প্রাক্কলিত মূল্যে ( সমান দরে) হয়েছে গত ২ বছর যাবত। এজন্য নির্দিষ্ট ঠিকাদার তাকে ১০% অগ্রীম দিয়েই কাজ নিশ্চিত করেন।দেশের প্রায় সকল ইজিপি টেন্ডারে ১০% নিম্নদর থাকলেও ব্যতিক্রম শুধু মাহমুদুল হকের ডিভিশন ০৩। কোন ঠিকাদার সরকারী নিয়মানুসারে ১০% নিম্নদর দাখিল করলে বিভিন্ন ঠুনকো অজুহাতে মাহমুদুল এটা বাতিল করেন। ঠিকাদাররা এর প্রতিকার চেয়ে প্রধান প্রকৌশলীর নিকট অভিযোগ করলে আবু জাফর মিয়া ঠিকাদারদের উপর বিরক্ত হন এবং দেখে নেয়ার হুমকী দেন। রেলওয়ের একজন প্রকৌশলী বলেন আমাদের কারো ১ টাকার কাজ দেয়ারও সাধ্য নেই। সকল কাজ প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশে তার পছন্দের ঠিকাদারদের দেয়া হচ্ছে। যে কোন কাজের প্রাক্কলন অনুমোদন দেয়ার পর পরই প্রধান প্রকৌশলী নির্ধারিত ঠিকাদারের কাছ থেকে ডিজি, মন্ত্রী বা সচিবের কথা বলে ১০% – ১৫% টাকা অগ্রীম নিয়ে নেন এবং টেন্ডার আহবানকারী নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন যেন এ ঠিকাদারকে কাজটি দেয়া হয়। তিনি এ নির্ধারিত ঠিকাদারকে অন্যান্যদের নিকট ডিজি বা মন্ত্রীর লোক বলে পরিচয় করে দেন।

তার এমন অনৈতিক নির্দেশের পর সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী ঐ ঠিকাদারকে কাজটি দেয়ায় সকল অবৈধ আয়োজন সম্পন্ন করেন। প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফরের সাথে ভাগ বাটোয়ারার সম্পর্কের কারণে ঢাকা ডিভিশন ০৩ এর প্রকৌশলী মাহমুদুল হক গত ২ বছর সকল কাজ প্রাক্কলিত মূল্যে (অং ঢ়বৎ) কার্যাদেশ দিয়েছেন। এজন্য তিনি সবার কাছ থেকে ১০% ঘুষ নেন এবং তাকে সবাই মিঃ ১০% নামেই ডাকেন। কোন ঠিকাদার প্রাক্কলিত মূল্যের নিম্নদরে টেন্ডার দাখিল করলেও মাহমুদুল হক তা ঠুনকো ত্রুটি দেখিয়ে বাতিল করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছেন। তার দপ্তরের সকল টেন্ডার প্রক্রিয়া তদন্ত করার জন্য ঠিকাদাররা রেল ডিজি কামরুল ইসলাম ও দুদক বরাবরে আবেদন করলেও কোন তদন্ত আলোর মূখ দেখেনি। রেল ভবনের একটি সূত্র জানিয়েছেন সাবেক ডিজি কামরুল ইসলাম চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ লাভের জন্য ৫ কোটি টাকা খরচ করেও সফল হতে পারেননি। দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী তার ফাইল নাকচ করেন। ৫ কোটি টাকার একটা বড় অংশের যোগানদাতা প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর ও তার লুটেরা সিন্ডিকেট। ডিজি সরদার সাহাদত আলী ও নতুন মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের ম্যানেজ করার নামে প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর ও তার সিন্ডিকেট কয়েক কোটি টাকা চাঁদাবাজী করেছেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে।

আবু জাফর সিন্ডিকেটের চট্টগ্রাম শাখা প্রধান সাবেক শিবির নেতা ডিভিশনাল ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম। মাত্র কয়েক বছরেই তিনি চট্টগ্রামের পলিটেকনিক এলাকায় ৭টি ফ্ল্যাট, মুরাদপুর ও হালিশহরে বাড়ী, ঢাকার রাজারবাগে ২টি বিলাসী ফ্ল্যাট সহ গাজীপুরে শতবিঘা জমি তথা শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চট্টগ্রামের রেলওয়েতে সবার মুখে মুখেমুখে শুনা যায় মন্ত্রী, সচিব ও ডিজি আসে যায় কিন্তু লুটেরা চক্রের কেশাঘ্র কেউ স্পর্শ করতে পারেনা। ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতিবাজ চক্রের সকল অপকর্মের তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেলপথ মন্ত্রী, সচিব ও ডিজির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.