আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৭ মার্চ ২০১৬, সোমবার |

kidarkar

আবারও স্বপ্নভঙ্গ

banglaশেয়ারবাজার ডেস্ক: ঝোড়ো হাওয়ায় হারিয়ে গেল একটা স্বপ্ন। এশিয়া কাপের শিরোপা আবারও নাকের সামনে দিয়ে চলে গেল। তাকে ধরা গেল না। ছোঁয়া গেল না। পাওয়া গেল শুধু সুবাস! ফাইনালে ভারতের কাছে ৮ উইকেটের হারে হারিয়ে গেল সেটাও।

ঝড়, বৃষ্টি, আলো, অন্ধকার—সবই দেখল এশিয়া কাপের ফাইনাল। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগে শুরু এক ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল সব। ধূলিঝড় ঢেকে দিল গোটা স্টেডিয়াম। বৃষ্টির ঝাপটা থেকে বাঁচতে দর্শকেরা আশ্রয় নিলেন গ্যালারির আংশিক ঢাকা চাতালের নিচে। তাতেও কি বাঁচা যায়! রাত সোয়া আটটার দিকে বৃষ্টি থামলে সবাই যাঁর যাঁর আসনে ফিরলেন মোটামুটি কাকভেজা হয়ে।
ফাইনালের উত্তাপে বৃষ্টিস্নান শুকাতে অবশ্য সময় লাগল না। বরং সারা দিনের প্রচণ্ড গরমের পর শান্তিতে খেলা দেখতে এ রকম শীতল পরশই বোধ হয় দরকার ছিল। স্টেডিয়ামের বাইরে বিকেল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকেরা গ্যালারিতে ঢোকার আগেই অনেকটা ক্লান্ত। বৃষ্টি কিছুটা হলেও ধুয়ে দিল তা। বাকি ক্লান্তিটা সবাই ভুলে গেলেন স্বপ্নের রাত দেখার আশায়। সেই স্বপ্ন পূরণ আর হলো না। শেষ দৃশ্যে শুধুই হতাশা। ফাইনালের রোমাঞ্চে কয়েক দিন ধরে কম্পমান মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম তখন যেন সমুদ্রের বুকে নেমে আসা সন্ধ্যার মতোই নিস্তরঙ্গ।

২০১২-এর পর আরও একবার বাংলাদেশ সুযোগ পেয়েছিল এশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরার। ফিরতে হলো শুধু শিরোপার সুবাস পেয়েই। তবে ঝড়-বৃষ্টির ঝাপটার পর শেষ পর্যন্ত খেলাটা তো হলো! কাল ম্যাচে একটি বলও না গড়ালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ এশিয়া কাপের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হতো। কিন্তু লড়াই না করে রাজ্য ভাগাভাগির চেয়ে লড়াই করে হারের মধ্যেও থাকে গৌরব। খেলা না হলে কাল কি আরও একবার দেখতে পেতেন মাহমুদউল্লাহর ওই ধ্রুপদি তাণ্ডব? বাংলাদেশ দল যে ১৫ ওভারেও হাতে ৫ উইকেট রেখে ১২০ করে ফেলতে পারে, টি-টোয়েন্টিতে এই উন্নতির রেখাচিত্র তো দেখানো যেত না!
টুর্নামেন্টের শুরুতে টি-টোয়েন্টির এশিয়া কাপে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা দূরতম কল্পনাতেই ছিল। তবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর শিরোপার স্বপ্ন না দেখাটাই হতো অন্যায়। কিন্তু এটাও মেনে নিতে হবে যে, সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। এশিয়া কাপের রানার্সআপ হওয়া থেকেও তাই খুঁজে নেওয়া যাক প্রাপ্তি। আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অন্তত এশিয়ার দ্বিতীয় দল হয়ে যাচ্ছে, সেটাও কম কী?

১৫ ওভারে ১২০ রানের চ্যালেঞ্জ আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হচ্ছিল না ভারতের জন্য। দ্বিতীয় ওভারেই রোহিত শর্মাকে স্লিপে সৌম্যর ক্যাচ বানান পেসার আল আমিন। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলির ৯৪ রানের জুটি ম্যাচ কেড়ে নেয় বাংলাদেশের হাত থেকে। সাকিবের প্রথম ও ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে দুজনে মিলে নেন ১৫ রান। তার আগের ওভারে পেসার আবু হায়দার দেন ১৪। শেষ ঝড়টা গেল আল আমিনের ওপর দিয়ে। ম্যাচের শেষ দুই ওভারে ১৯ রান দরকার ছিল ভারতের। কিন্তু আল আমিন ১৪তম ওভারের পাঁচ বলেই দিলেন ২০। মিড উইকেট দিয়ে জয়সূচক ছক্কায় শিরোপায় নিজের ‘অটোগ্রাফ’ দিয়ে রাখলেন অধিনায়ক ধোনিও।
উইকেট হালকা সবুজাভ থাকলেও তাতে রান ছিল। ব্যাটসম্যানদের কাজ ছিল শুধু রানটা তুলে নেওয়া। তামিম তাতে সফল না হলেও সৌম্য চেষ্টা করেছেন সে ঘাটতি ঢেকে দিতে। ওপেনিং জুটিতে চার ওভারে ২৭ সেটারই সৌজন্যে। পরপর দুই ওভারে দুজনই ফিরে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল গতিটা বুঝি এবার আরও কমে যাবে। কিন্তু সাকিব আল হাসান যে কাল চারেই নেমে গেলেন!
জায়গা ফিরে পাওয়ার ম্যাচে উইকেটে নেমে সঙ্গী হিসেবে পান সাব্বিরকে। একজনের ফর্ম ধরে রাখার ম্যাচে আরেকজনের ফর্মে ফেরার লড়াই। ২৯ বলে ৩২ রানের ইনিংসে মাত্র দুটি চার বলবে সাব্বিরের ব্যাট এদিন আগের ম্যাচগুলোর মতো আক্রমণাত্মক ছিল না। তবে সাকিব বল অপচয় করেননি। ১৬ বলে ২১ রানের ইনিংসে ডট বল চারটি।
১৫ ওভারের ম্যাচে অলআউট হওয়া এমনিতেও একটু কঠিন। তার ওপর মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, নাসির, মাশরাফিরা তখনো ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায়। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, সাকিব আক্রমণই চালিয়ে গেলেন ভারতীয় বোলারদের ওপর। তবে আগের তিন ম্যাচের মতো কালও এই কাজটা সবচেয়ে ভালো করেছেন মাহমুদউল্লাহ। পরপর দুই ওভারে সাকিব, মুশফিক, মাশরাফির আউটেও তাই বাংলাদেশ শিবিরে চাপ তৈরি হয়নি। ১৩তম ওভারে আশিস নেহরার চার বল খেলেই মাহমুদউল্লাহ নিয়েছেন ৯, দুই ছক্কা আর এক বাউন্ডারিতে হার্দিক পান্ডের করা ১৪তম ওভারে ২০। শেষ পর্যন্ত টানা চতুর্থ ম্যাচে অপরাজিত মাত্র ১৩ বলে ৩৩ রান করে। স্টেডিয়াম লন্ডভন্ড করে দেওয়া সন্ধ্যার ওই ঝড়ের পর মাহমুদউল্লাহর ইনিংসটাকে বলতে পারেন আরেকটা ঝড়। কিন্তু তাতে ভারত লন্ডভন্ড তো হলো না!
হলো না কারণ, জসপ্রীত বুমরার শেষ ওভারে এসেছে মাত্র ৭ রান। ম্যাচ শেষে ওই ওভারটাকেই মনে হলো স্বপ্নঘাতক। শেষ ওভারে ৭-এর জায়গায় ১৭ হলেও হয়তো আরেকটু লড়তে পারত বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের শেষ দৃশ্যও হতো না এমন বিষণ্ন।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.