জেল পালিয়ে যারা বিখ্যাত!
![](https://www.sharebazarnews.com/wp-content/uploads/2016/04/jail.jpeg)
শেয়ারবাজার ডেস্ক: জেল তো অনেকেই পালায়। ছোটখাটো চোর থেকে শুরু করে অনেক দাগী আসামীও। তবে তাদের কয়জনকে মানুষ মনে রাখে আর মনে রাখে ইতিহাস? এমনই কিছু জেল পলাতককে নিয়েই আজকের এই আয়োজন। শুরুটা খ্যাতি দিয়ে শুরু না হলেও পরবর্তী জীবনে এই জেল পালানোর ঘটনাই পরিচিত করে তুলেছে যাদেরকে সবার কাছে। বিশেষ করে পুলিশের কাছে তো বটেই!
১. জর্জ রাইট ১৯৬২ সালের ২৩ নভেম্বর ১৯ বছর বয়সী জর্জ নিউ জার্সির অসবারি পার্কের কাছে আরো তিনজনের সহায়তায় একের পর এক বেশকিছু অস্ত্রসহ ডাকাতি করে। এসময় একজন মানুষকেও মারে সে। এক সপ্তাহ পরে অপরাধীদেরকে ধরা হয়। ১৯৬৩ সালে ১৫-৩০ বছরের সাজাসহ জর্জকে নিউ জার্সির লেসবার্গ জেলে পাঠানো হয়। তবে সাত বছর পরেই জর্জ ও তার তিন সঙ্গী জেল থেকে পালিয়ে যায়। জেলের নিরাপত্তা স্বল্পতার কারনে তারা খুব সহজেই জেলের সামনে রাখা ওয়ার্ডেনের গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। জেল থেকে পালিয়েই তারা ব্ল্যাক লিবারেশন আর্মিতে যোগদান করে।
তারপর খুব সহজেই ছদ্মবেশ নিয়ে চলে আসে মিয়ামিতে। সেখানে ল্যান্ড করার আগেই প্লেন ছিনতাই করে তারা আর এফবিআই এর কাছে এক মিলিয়ন ডলার দাবী করে। এফবিআই সেটা সাথে সাথেই দিয়ে দেয়। এভাবেই অনেক দিন নানারকম কুকর্মের সাথে নিজেদেরকে বেশ ভালোভাবেই জড়িয়ে রাখে এই ছোটখাটো দলটি। তবে ১৯৭৬ সালে জাল পাসপোর্টের কারনে পুলিশর হাতে ধরা পড়ে জর্জের সঙ্গীরা। ফ্রান্স পাঁচ বছর সাজাও হয় তাদের। জর্জ যদিও তখনো মুক্তই ছিল। তবে এর প্রায় চার দশক পর আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে পুশিশ জর্জকে খুঁজে পায় এবং ২০১১ সালে জেল থেকে পালানোর ৪১ বছর পর গ্রেপ্তার করে।
২. পলা এইলিন ক্যারোল ১৯৭৫ সালে ২২ বছর বয়সী ক্যারোলকে চুরির দায়ে ৫ বছরের জন্যে ফ্লোরিডার ওকালার শোধনাগারে পাঠানো হয়। জেলে যাওয়ার ৪৭ দিন পরেই সেখান থেকে পালিয়ে যায় সে। তবে তার পালানোর ব্যাপারটি এখনো অনেকটাই ধোঁয়াশা সবার কাছে। প্রহরীর ভাষ্যমতে, এক ঘন্টা আগেও এই নারী অপরাধি তার জায়গাতেই ঘুমাচ্ছিলো। বাইরে বেরিয়েই নিজের নাম পাল্টিয়ে শ্যারন এডওয়ার্ডস নামে পরিচিত হয় ক্যারোল এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ার শ্যারন নামের এক নারীর নিরাপত্তা কার্ডের নাম্বারও ব্যাবহার করা শুরু করে। ক্যারোল ফ্লোরিডার মেলবোর্নে স্থায়ী হয় এবং সেখানেই বিয়ে করে।
তিনটি সন্তান হয় তার। নিজেকে তখন কেবল সন্তান, বাগান আর কিছু সামাজিক কাজের ভেতরেই আবদ্ধ রেখেছিল ক্যারোল সেসময়। বেশ কিছুদিন কেটে যায় এভাবেই। দাদীও হয়ে যায় ক্যারোল একসময়। ২০১০ সালে পালিয়ে আসার ঠিক ৩৪ বছর পর পুলিশের কাছে আবার ধরা পড়ে সে। যদিও তখন তার ভাষ্যমতে, সে আর আগের ক্যারোল নেই। সে পাল্টে গেছে। কিন্তু পুলিম তাকে এত সহজে ছাড়েনি। জেলে ঢুকতে হয় আবার তাকে। আর সেখানেই ১১ মাস কাটিয়ে ২০১১ সালে বাইরে বের হয় ক্যারোল।
৩. সুসান লে ফেভরে ১৯৭৫ সালে মিশিগানে কিছু সন্ত্রাসীর কাছে সামান্য পরিমাণ হিরোইন বেচার সময় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে সুসান। মিশিগানেই বিচার হয় তার। নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেন সুসান। ফলে সাজা হিসেবে ১০-২০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয় তাকে মিশিগানের ওয়াইনি রজ্যের জেলে। তবে এতটা সময় জেলে থাকাটা পোষায়নি এ অপরাধীর। ফলে মাত্র ১ বছর ১৯ দিন কারাভোগের পরই পালায় সে জেল থেকে। কাঁটাতারের বেড়া টপকাতে এ সময় তাকে সাহায্য করে তার দাদা।
পালানোর পরপরই কিছু কাপড়, টুথব্রাশ আর ২০০ ডলার নিয়ে পালিয়ে আসে সুসান ক্যালিফোর্নিয়ায়। ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছেই প্রথমে সুসান নিজের নাম বদলে ফেলে। মেরি ডে হিসেবে পরিচিত হয়ে যায় সে এখানে। মিশে যায় মানুষের ভিড়ে। নিজের জীবন ধারনের জন্যে এসময় সে করতে থাকে নানা রকম অদ্ভূত রকমের কাজ। পালানোর ঠিক ৮ বছর পরে ১৯৮৪ সালে সুসানের দেখা হয় এলান ওয়ালসের সাথে। একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করে নেয় তারা পরিচয়ের ঠিক দশ মাস পর।
এরপরের ২২ বছর সান ডিয়াগোতে বসবাস করে সুসান আর দশটা গৃহবধুর মতনই। তিন-তিনটি সন্তান হয় এ দম্পতির। তাদেরকে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই মাঝারী মানের একটা জীবন চালাচ্ছিল সুসান আর এলেন। যদিও সুসান তার মিশিগানের আত্মীয়দের কাছ থেকে পুলিশের তার খবর পাওয়ার ব্যাপারটা জেনে গিয়েছিল, এলেন এ সম্পর্কে জানতোনা কিছুই।
২০০৮ এর এপ্রিল মাস চলছিল তখন। সুসান বাড়ির বাগানে কাজ করছিল। এমন সময় পুলিশ এসে হাজির হয় সেখানে। পরবর্তী টানা ১৩ মাস জেলে কাটে তার। এরপর প্যারোলে আবার বেরিয়ে আসলেও নিজের অতীত নিয়ে প্রচন্ড অনুতপ্ত হয় সুসান। আর সেই অনুভূতি থেকেই বই লেখার কাজে হাত দেয়। বই লেখার পাশাপাশি অপরাহ উইনফ্রের অনুষ্ঠানেও অংশ নেয় সুসান।
শেয়ারবাজারনিউজ/রু