সাধারন বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে আইডিআরএ’র লাগাম
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশে এই প্রথম সাধারন বীমা কোম্পানির (নন-লাইফ) ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। গেজেট প্রকাশের দিন থেকেই তা কার্যকর হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে আইডিআরএ।
জানা যায়, ১৮ জুলাই ‘নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায়ে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানমালা-২০১৬’ নামে এ গেজেটটি প্রকাশ করা হয়। বীমা আইন, ২০১০-এর ধারা ৪৮ ও ৬৩-এর ক্ষমতাবলে এ প্রবিধানমালা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান শেয়ারাবাজার নিউজ ডট কমকে বলেন, গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানটি কার্যকর হিসেবে গণ্য হবে। বৃহস্পতিবার আমরা কোম্পানিগুলোকে তা জানিয়ে দিয়েছি।
প্রবিধানমালার ৩-এর উপপ্রবিধানমালা ১-এ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করে একটি ছক উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, কোনো পঞ্জিকা বছরে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবসা সংগ্রহের কমিশন, পারিশ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় ছকে নির্দেশিত শতকরা হারের সীমা অতিক্রম করতে পারবে না।
চূড়ান্ত প্রবিধান অনুসারে, সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত নৌ-বীমার ক্ষেত্রে বীমাকারী ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ২৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে। অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে তা ৩৫ শতাংশ।
৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম আয় থেকে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে। ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম আয় থেকে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে। ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় থেকে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে। ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা যাবে।
পরবর্তী ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম আয়ের মধ্যে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে। ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম থেকে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে। ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে তদূর্ধ্ব মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের বিপরীতে অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা বাবদ ২২ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ খরচ করতে পারবে নন-লাইফ কোম্পানিগুলো।
এছাড়া প্রবিধানমালা ৩-এর উপপ্রবিধান ২-এ বলা হয়েছে, ‘উপপ্রবিধান (১)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, বীমাকারী তার বীমা ব্যবসার প্রথম ১০ (দশ) বছরের মধ্যে কোনো পঞ্জিকা বছরে অনুমোদিত সীমার বাইরে নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারবে। (ক) প্রথম বছরে তার পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ১০ (দশ) শতাংশ অর্থ; (খ) পরবর্তী ৩ (তিন) বছরে প্রতি পঞ্জিকা বছরে মোট পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের অর্থ; (গ) পরবর্তী ৩ (তিন) বছরের প্রতি পঞ্জিকা বছরে মোট পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের অর্থ বা সংশ্লিষ্ট বছরে সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত পলিসির গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ৫ শতাংশের মধ্যে যেটি কম হয় সে পরিমাণ অর্থ; (ঘ) পরবর্তী ৩ (তিন) বছরের প্রতি পঞ্জিকা বছরে পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের তিন-চতুর্থাংশ অর্থ বা ওই বছরে সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যু করা গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে যেটি কম হয় সে পরিমাণ অর্থ।
উপপ্রবিধান ৩-এ বলা হয়েছে, সেসব বীমাকারীর প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত, তাদের প্রধান কার্যালয়ের ব্যয়ের একটি অংশ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমাভুক্ত হবে। তবে তা সরাসরি ও গৃহীত পুনঃবীমা ব্যবসাসহ এবং প্রদত্ত পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বাদে কোনোভাবেই ওই বছরে বাংলাদেশে অর্জিত মোট প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশের বেশি হবে না।
জানা গেছে, এর আগে নন-লাইফ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হতো ১৯৫৮ সালের বীমা বিধিমালার আওতায়। এতে কোম্পানিগুলোর ব্যয় নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পাড়ায় নতুন প্রবিধান করা হয়।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু/আ