আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩১ জুলাই ২০১৬, রবিবার |

kidarkar

হোলি আর্টিজান হামলায় জিম্মি হাসনাত করিম এখন কোথায়?

download (1)শেয়ারবাজার ডেস্ক: ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার সময় জিম্মি এবং পরে পুলিশের হাতে আটক হাসনাত করিম এখন কোথায়? খবর বিবিসি বাংলার।

এ প্রশ্নের কোনও সুস্পষ্ট উত্তর এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে পাওয়া যাচ্ছে না এবং সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে পরস্পর বিরোধী বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিষ্টার নাদিম কাদির বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, হাসনাত করিমকে দুই-তিন সপ্তাহ আগে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অথচ এর আগে গত মঙ্গলবার সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছিলেন, হাসনাত করিম এখনো আটক আছেন এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য হাসনাত করিমের ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও কিশোর বয়সে লন্ডনে চলে আসেন। লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি প্রকৌশল বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করার পর লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। এরপর কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর তিনি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন গত দশকের শুরুর দিকে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে কমান্ডো অভিযান শুরুর কিছু আগে জঙ্গিরা হাসনাত করিম এবং তার পরিবারকে ছেড়ে দেয়। তবে এর পর থেকেই তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা পারভিন জানিয়েছেন, শেষ বার স্বামীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় ১৩ই জুলাই। তিনি জানান, সেসময় হাসনাত করিমকে খুবই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। তার অবস্থা খুব ভালো মনে হচ্ছিল না। বাংলাদেশ সরকার তাকে শিগগিরই ছেড়ে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

লন্ডনে হাসনাত করিমের একজন আইনজীবী রডনি ডিক্সন বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হয় হাসনাত করিমকে ছেড়ে দেয়া, নয়তো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা। তিনি আরও বলেন, হাসনাত করিমকে তার আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে এবং তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগের সুযোগ দিতে হবে।

রডনি ডিক্সন জানান, জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রেটরি ডিটেনশন’ যাতে হাসনাত করিমের অবস্থা দেখতে পারে, সেজন্যে তারা ইতোমধ্যে চিঠি লিখেছেন।

রডনি ডিক্সন বলেন, গুলশানে যে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই তা তদন্ত করবে। কিন্তু যেহেতু হাসনাত করিমের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই এখন তাকে মুক্তি দেয়া উচিত।

উল্লেখ্য, গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর একজন কোরিয়ান নাগরিকের গোপনে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর হাসনাত করিমের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম পুরো পরিবার নিয়ে হামলার দিন হোলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়েছিলেন তাঁর কন্যার জন্মদিন উদযাপন করতে।

তবে গুলশান সংকট চলাকালে তাকে জঙ্গিদের কয়েকজনের সঙ্গে হাঁটতে, কথা বলতে এবং সিগারেট খেতে দেখা যায়। হাসনাত করিম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

তবে হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা পারভিন লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জঙ্গিরা যখন বুঝতে পেরেছিল হাসনাত করিমের পুরো পরিবারই রেস্টুরেন্টে রয়েছে, তখনই তারা হাসনাত করিমকে মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহারের জন্য বেছে নিয়েছিল। কারণ তারা ভেবেছিল পরিবার রেখে হাসনাত করিম পালিয়ে যাবে না।

তিনি জানান, এরপর হাসনাত করিমকে জঙ্গিরা নানা কাজ করতে বাধ্য করে এবং তাদের সামনে সামনে হাঁটতে বলে যাতে করে বাইরে থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর বন্দুকধারীরা গুলি করলে তাকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

শারমিনা পারভিন দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, জঙ্গিরা তাদেরকে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে বলেছিল। যখন তার স্বামী সুরা ফাতিহা পড়ছিলেন, তখন বেশ নার্ভাস ছিলেন। তখন জঙ্গিরা তাকে এই বলে ভর্ৎসনা করেছিল যে তিনি এর প্রকৃত অর্থ জানেন না।

শেয়ারবাজারনিউজ/মা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.