স্থিতিশীলতা আনয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাজারবান্ধব হতে হবে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো গুরুত্ব দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনায় কিছুটা নমনীয় হয় তাহলে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা অনেকটাই বজায় থাকবে। যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরিতে সহায়ক হবে। কারণ দীর্ঘমেয়াদে আস্থা অর্জনে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক করণীয় রয়েছে, যা বাজারকে হাজার কোটিতে লেনদেন করতে প্রভাবিত করবে। এমনটাই বললেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে অর্থনীতি অনেকটাই উন্নতি পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজারে প্রতি দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে রকম কাজ করছে। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজারে প্রতি কোন প্রকার দীর্ঘ উন্নয়ন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এদিকে শেয়ারবাজারে উন্নয়ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়েছেন স্টার লিংক স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজের সিইও এস. এম. নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো নজর দেওয়া উচিত। বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে নজর দিলে দেখা যায়, কয়েক বছর পর পরই দেশগুলোর শেয়ারবাজার বিভিন্ন সংকট দেখা দেয়। সে সংকট থেকে স্থিতিশীলতা ফেরাতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয় দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ফলে শেয়ারবাজারে অনেকটাই স্থিতিশীলতাই ফিরে। কিন্তু আমাদের দেশের শেয়ারবাজারের প্রতি কোন প্রকার দীঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নাসির উদ্দিন আরো বলেন, শেয়ারবাজারের প্রতি যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দূর করতে হবে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে যারা কারসাজি করবে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যদিকে গত বছরের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পুঁজিবাজারের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য অনেকেই আশ্বাস দিয়েছিলো। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। কারণ অল্প কয়েকদিনের ইতিবাচক থেকে ফের নেতিবাচক দেখা গেছে বাজারের লেনদেন।
গত এক বছরে দেশের শেয়ারবাজারের সূচক অনেটাই কমে গেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত (১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে ৩১ আগস্ট ২০১৬) এক বছরে ৪.১৯ শতাংশ কমেছে।
এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, আসলে গত বছরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শেয়ারবাজার অনেটাই নেতিবাচক ধারায় বিরাজ করেছিলো।
তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় অর্থনীতিসহ দেশের সব সেক্টরের অবস্থা যে একবারে খারাপ হয়েছে তা বলা যাবে না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় শেষ পর্যন্ত বাজার কোথায় নিয়ে দাঁড়ায়, এ নিয়ে কেউ কোনো অঙ্কই মেলাতে পারছিলো না। যে কারণে সাধারণ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ছাড়ছেন। শুধু তাই নয় শেয়ারবাজার থেকে বিমুখও হয়েছেন অনেকেই। তবে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা বিনিয়োগ বান্ধব হওয়ায় শেয়ারবাজারে কিছুটা হলেও ইতিবাচক ধারায় বিরাজ রয়েছে। কিন্তু শেয়ারবাজারকে হাজার কোটির ঘরে লেনদেন করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো নজর দিতে হবে।
এদিকে শেয়ারবাজারের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মার্কেট বান্ধব হওয়া দরকার বলে মনে করেন এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব এইচ মজুমদার।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের ব্যাংক সুদ হার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হওয়ায় ব্যাংকগুলো যেমন শেষ হয়ে যাচ্ছে; তেমনি ইনভেস্টররাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র লাভ হচ্ছে ক্যাপিটাল মার্কেট। দেখবেন অনেকেই বলছে মার্কেটের জন্য এটা করেছি সেটা করেছি। আসলেই কিছু করা হচ্ছে না। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মার্কেট বান্ধব না হয় তাহলে কোন প্রভাব পড়বে না। পৃথিবীতে যেতো ব্ল্যাস্ট হয়েছে এমন সব ঘটনার রেকর্ডই আমার কাছে আছে। তা যদি খতিয়ে দেখা হয় তাহলে দেখা যাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগিয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার উল্টো পথে হাটে।
এদিকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর কি পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকে এক্সপোজার হিসেবে দেখানো হচ্ছে। যা ঠিক নয় বলে জানান মাহবুব এইচ মজুমদার।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম. আর