চলতি বছরে হচ্ছে না ডেরিভেটিভ: নেপথ্যে ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বার্ষিক কর্মসম্পাদনা চুক্তি অনুযায়ী সময় মত হচ্ছে না ডেরিভেটিভ মার্কেট প্রতিষ্ঠা। বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের মধ্যে ইটিএফ নীতিমালার অনুমোদন হলেও সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না ডেরিভেটিভ মার্কেট নীতিমালা। বিষয়টি শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ কিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান।
এ মার্কেট প্রতিষ্ঠার আগে প্রয়োজন আরও কিছুটা প্রস্তুতি। এমনটাই মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠনের জন্য ডেরিভেটিভ নীতিমালা আটকে আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ডেরিভেটিভ মার্কেট গঠনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালী বলেন, ডেরিভেটিভ মার্কেটের জন্য আরও কিছুটা প্রস্তুতি নেয়া দরকার। কেননা ডেরিভেটিভের জন্য প্রয়োজন হাই লিক্যুইডিটি সম্পন্ন শেয়ার। যেখানে আমাদের শেয়ারবাজারে রয়েছে হাতে গোনা চার থেকে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার। প্রথমে এ কয়েকটি কোম্পানি নিয়ে শুরু করে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং পরে তা কাজে লাগিয়ে এ মার্কেটের ব্যাপ্তি ঘটালে বাজার উপকৃত হবে। তিনি বলেন, একই সাথে প্রয়োজন রয়েছে এ মার্কেট সম্পর্কে অ্যাওয়ারনেস বা সচেতনতার। কেননা এটা হল একটা ভাইব্রেন্ট সম্পন্ন মার্কেট।
ডেরিভেটিভের জন্য বাজারে গভীরতার প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে লালী বলেন, আমাদের বাজার গভীরতা আন্তর্জাতিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কম, এটা সবাই জানেন। তবে ডেরিভেটিভের জন্য বাজার গভীরতার প্রয়োজনীয়তা নেই, রয়েছে উচ্চ তারল্য সম্পন্ন শেয়ারের।
তবে অনেকেই বলছেন, মূলত ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট কোম্পানির জন্যই ডেরিভেটিভ নীতিমালা প্রনয়ন আটকে আছে। কেননা ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠন না হলে ডেরিভেটিভ কাজ করতে পারবে না। কারন এ বাজারের ফলে প্রচুর পরিমানে শেয়ার লিক্যুইডিটি বেড়ে যাবে। যা ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট ছাড়া সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্টের খসড়া অনুমোদন করলেও তার বাস্তবায়ন চলতি বছরে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রনালয়ে এর অধীনস্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্পর্কিত বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ, ডেরিভেটিভ মার্কেট নীতিমালা, ইটিএফ ফান্ড বিধিমালা এবং আইপিও (সংক্রান্ত) সিদ্ধান্ত অন্তর্ভূক্ত ছিল। ফলে মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছরের মধ্যেই ডেরিভেটিভ মার্কেট নীতিমালা করার নির্দেশ ছিল।
উল্লেখ্য, ডেরিভেটিভ মার্কেট প্রতিষ্ঠায় ২০১৪ সালে একটি কমিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে গঠন করা হয়। দু বছরের বেশি পার হয়ে গেলেও নীতিমালা না থাকায় এ মার্কেট প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। সে সময় ডেরিভেটিভ মার্কেট সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে এবং সদস্য হিসেবে পরিচালক ফারহানা ফারুকী এবং সদস্য সচিব হিসেবে বিএসইসি’র পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরের মত এ বছরও বার্ষিক কর্মসম্পাদনা চুক্তির পর্যালোচনায় বিএসইসি’কে কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আগের বছরগুলোর মত এ বছরের চুক্তির মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী অন্তর্ভূক্ত ছিল। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নারী বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যেমে বাজারে সচেতনভাবে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া এ বছর বিএসইসি’কে ন্যূনতম ১০টি প্রাথমিক গণ প্রস্তাব অনুমোদনের শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়। অর্থাৎ এক বছরে বিএসইসিকে নূন্যতম ১০টি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিতে হবে। এর পাশাপাশি ডেরিভেটিভ মার্কেট নীতিমালা পূর্ণাঙ্গ করতে এবং এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) বিধিমালা করার লক্ষ্যও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিএসইসি সফলভাবে লক্ষ্য পূরণ করছে বলে জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে বিএসইসি’র মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, কর্ম সম্পাদন চুক্তির মাধ্যমে মন্ত্রীসভা বাকি সব মন্ত্রনালয়ের সাথে বছরের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে চুক্তি করে। বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তির মধ্যে আইপিও অনুমোদন, ডেরিভেটিভ নীতিমালা এবং ইটিএফ ফান্ড বিধিমালা অন্তর্ভূক্ত ছিল। ডেরিভেটিভের যে নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে তা প্রনয়নের কাজ চলছে, তবে হয়তো ডিসেম্বরের শেষ করা যাবে না বলে জানান সাইফুর রহমান।
শেয়ারবাজারনিউজ/রু