পিপলস লিজিংয়ে বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পরিচালকদের নামে জমি কেনা ও সাবসিডিয়ারিতে মার্জিন ঋণ প্রদানে অনিয়ম হয়েছে বলে জানিয়েছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএস) বহিঃনিরীক্ষক। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ ও সম্পদের বিপরীতে বড় অংকের সঞ্চিতি ঘাটতির কারণে বিপাকে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় এর ব্যবসায়িক অবস্থা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) রোববার প্রকাশিত নিরীক্ষকের মতামতে বলা হয়, পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদনে মার্জিন ঋণ প্রদানে অনিয়ম, সঞ্চিতি ঘাটতি, কোম্পানির টাকায় জমি কিনে তা পরিচালকদের নামে নিবন্ধন করা এবং এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমতি না নেয়ার মতো অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টস স্ট্যান্ডার্ডের নীতিমালা পরিপালন করা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয় পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে।
এর আগে ২০১৫ সালে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের অভিযোগে পিপলস লিজিংয়ের পাঁচ পরিচালককে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটির এসব টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে এর সাবেক পরিচালকদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কোম্পানিটির পর্ষদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক রয়েছে।
রোববার প্রকাশিত মতামতে পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ হিসাব বছরে কোয়ালিফায়ার অভিমত দিয়েছে এর নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রথমত. ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া ২০১৬ হিসাব বছরে মার্জিন ঋণ হিসাবের বিপরীতে কোম্পানিটির ১১৫ কোটি টাকা সঞ্চিতি ঘাটতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে নিরীক্ষক জানায়, এ টাকা কোম্পানিটি অশ্রেণীকৃত ঋণ হিসেবে দেখিয়েছে। কিন্তু নিরীক্ষকের হিসাবে এ মার্জিন ঋণ মন্দ লোকসানে (bad loss) পরিণত হয়েছে।
তারা জানায়, নিজেদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ১৬ কোটি ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে পিপলস লিজিংয়ের। তবে শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসানে রয়েছে এ সাবসিডিয়ারি, যার নেতিবাচক ইকুইটি বহন করছে পিপলস লিজিং। কারণ ৩১ ডিসেম্বর , ২০১৬ পর্যন্ত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটির ইকুইটি ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা কমে হয়েছে ৯ কোটি ৭ লাখ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকার সঞ্চিতি রাখেনি।
নিরীক্ষক জানায়, পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালকরা জেনিথ হোল্ডিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রিন রোডে ৬৫ কাঠা জমি কেনার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তবে সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানির হিসাব থেকে ১২৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জমি কেনা হলেও তা পরিচালকদের মার্জিন ঋণে সমন্বয় করে তাদের নামে নিবন্ধন করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমতিও নেয়নি তারা।
এছাড়া আগের বছরে কোম্পানিটি অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিবেদনের নোট-৯-এর অধীনে ৯০ শতাংশ এবং নোট-২.০৩-এর অধীন মোট সম্পদের ৫৪ শতাংশ ক্ষতি দেখানো হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতির সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে পারেনি কোম্পানিটি, যা কোম্পানির পুনঃহিসাব বিবরণীতে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (বিএএস-৮) সমর্থন করে না।
পিপলস লিজিং তার সাবসিডিয়ারিতে কোনো মার্জিন ঋণ হস্তান্তর না করা সত্ত্বেও ওই প্রতিষ্ঠান ১১৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার মার্জিন ঋণ রয়েছে বলে জানিয়েছে। যদিও বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাবসিডিয়ারি মার্জিন প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মূল প্রতিষ্ঠান থেকে এ ঋণ হস্তান্তরের বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য, টানা লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরে কোন প্রকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি পিপলস লিজিং। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১.৭৩ টাকা এবং শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১০.৮৮ টাকা এবং এনওসিএফপিএস হয়েছে ৪.৩০ টাকা নেগেটিভ।
এ কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর, সকাল সাড়ে ৯টায়, রাওয়া কনভেশন হল, মহাখালী, ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৭ আগস্ট। কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ সমাপ্ত অর্থবছরেও বিনিয়োগকারীদের কোন প্রকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি।
প্রসঙ্গত কয়েক দিনে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১০.৬০ টাকা থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে ১২.২০ টাকা হয়েছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ