পতনের রেশ কাটিয়ে চাঙা হয়েছে পুঁজিবাজার
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: চলতি বছরের শুরু থেকেই বাজারমুখী হতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। সাইডলাইনে থাকা পোর্টফোলিও ম্যানেজাররা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন ফান্ড নিয়ে বাজারে প্রবেশ করছে। যে কারণে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন উভয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতনের রেশ কাটিয়ে সম্প্রতি কিছুটা চাঙা হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এর জের ধরে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কেননা নতুন বছর, নতুন সরকার, নতুন অর্থমন্ত্রী এবং সরকারের আগামী পাঁচ বছরের ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক প্রতিশ্রুতি রয়েছে অর্থাৎ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পুঁজিবাজার ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে। সামনে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। তবে এখন মূল কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা। কারণ সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাজারের গ্রোথ যদি না থাকে সেটিকে পুঁজিবাজার বলা যায় না। দেশে অনেক সরকারি, বেসরকারি এবং বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি ব্যবসা করে যাচ্ছে কিন্তু পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব আসছেন তার পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে। তাই এসব বিষয় তিনি নজরদারিতে রাখবেন। তাছাড়া দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হবে বলেও আশা করছেন তারা।
সাপ্তাহিক ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থান ঘটেছে। পাশাপাশি সব ধরনের সূচকও বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিনই বেড়েছে সূচক। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের উভয় শেয়ারবাজারে সব ধরনের সূচক বেড়েছে। এদিকে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমান কিছুটা বেড়েছে। আলোচিত সপ্তাহটিতে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৯২৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬৪ হাজার ১২৭ টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার ৫৩১ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫১ টাকা। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিলো ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪৩ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৭ টাকা। সে হিসবে আলোচিত সপ্তাহ বাজার মূলধন বেড়েছে ৩.১৯ শতাংশ।
সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৩.৭০ শতাংশ বা ২০৬.৮৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৩.৫৯ শতাংশ বা ৬৯.৭৫ পয়েন্ট। অপরদিকে শরীয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৩.৭২ শতাংশ বা ৪৭.৩০ পয়েন্ট। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৪৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ২৬১টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ৭৯টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৭টির এবং লেনদেন হয়নি ২টির। এগুলোর ওপর ভর করে গত সপ্তাহে লেনদেন মোট ৪ হাজার ৯২৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬৪ হাজার ১২৭ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। তবে এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ১৫১ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার ০৬৭ টাকার। সেই হিসাবে সমাপ্ত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ২ হাজার ৭৭৪ কোটি ১০ লাখ ৬০ হাজার ৬০ টাকা।
আর সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৭.১৮ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৭.৩২ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৩.৭১ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে ১.৭৮ শতাংশ।
সপ্তাহ শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স ৩৫৯.২৮ পয়েন্ট বা ৩.৪৬ শতাংশ বেড়ে সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭২৬ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে হাতবদল হওয়ার ২৯৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২১২টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির। এগুলোর ওপর ভর করে বিদায়ী সপ্তাহে ২৬৪ কোটি ৬২ লাখ ১১ হাজার ৭৬২ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু