আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ অগাস্ট ২০১৫, শনিবার |

kidarkar

কেডিএস নিয়ে সিএসইর বিশ্লেষণ

kds cseশেয়ারবাজার রিপোর্ট: আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেডের প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন। আর বিনিয়োগকারীদের জন্য এ কোম্পানি সম্পর্কে বিশ্লেষণধর্মী তথ্য প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

নিম্নে কেডিএস এক্সেসরিজ নিয়ে সিএসইর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত তথ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য তুলে ধরা হলো:

‘কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেড (KDSAL)’

>প্রতিষ্ঠান পরিচিতিঃ
KDSAL (পূর্বে কেডিএস প্যাকেজিং লি.) প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন লাভ করে ২১ এপ্রিল, ১৯৯১ সালে। পরে প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে আত্ম-প্রকাশ করে ১৭ এপ্রিল, ২০১২ সালে। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা থেকে ১০ টাকায় রূপান্তর করে ১০ আগস্ট, ২০১০ সালে।

১৯৯১ সাল থেকে ব্যবসা করে আসা ৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় রয়েছে ১৭ কোটি টাকা। কোম্পানিটি ব্যবসা পরিচালনা করছে গাজীপুর ও চট্টগ্রামে দুই প্রজেক্টের মাধ্যমে।

KDSAL বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ১ জুলাই, ১৯৯১ সালে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে।

>ব্যবসার ধরণ:
KDSAL বাংলাদেশের বৃহত্তম টেক্সটাইল এক্সেসরিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। KDSAL-এর মূল পণ্য হচ্ছে কার্টন, লেবেল, ন্যারো ফ্যাব্রিক্স, ইলাস্টিক, অফসেট প্রিন্টিং, বাটন ইত্যাদি। এছাড়াও প্যাকেজিং এর কাজ করে থাকে।

কোম্পানির মোট আয়ে ১০%-এর বেশি অবদান রাখা পণ্য হলো কার্টন ৯১.১০% ।

>ক্রেতাসমুহ:
KDSAL এর প্রধান ক্রেতা হলো EPZ এলাকায় অবস্থিত শতভাগ রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসমূহ । ক্রেতার চাহিদা অনুসারে KDSAL পণ্য সরবরাহ করে থাকে।

>ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা:
বাংলাদেশে বহুসংখ্যক গার্মেন্টস আছে এবং তাদের এক্সেসরিজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও প্রচুর আছে। এদের উল্লেখযোগ্য দেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী :
ক) তাইহুং প্যাকেজিং লি.
খ) ব্যাবিলন প্যাকেজিং লি.
গ) এমএনইউ প্যাকেজিং লি.
ঘ) অলিম্পিক এক্সেসরিজ লি.

>কাঁচামাল-এর উৎস এবং প্রধান সরবরাহকারী নাম:
KDSAL-এর মূল উপাদান হচ্ছে লিনের পেপার (১৫০-২৫০ GSM), সাদা লিনের পেপার, ফ্লুটিং পেপার, মিডিয়াম পেপার, স্টার্চ, পিপি স্ত্রাপ, ডুপ্লেক্স বোর্ড (৩০০-৫০০ GSM), সুতা, সেলাই সুতা, তন্তু (নাইলন, পলিস্টার, ফিলামেন্ট), রাবার থ্রেড, মুদ্রণ কালি, ট্রান্সফার ফিল্ম, বিভিন্ন ধরণের রেজিন ইত্যাদি।

প্রতিষ্ঠানটি এসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করে। কোম্পানীর কিছু বিশ্বস্ত সরবরাহকারী আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুর, চীন, হংকং, মালয়েশিয়া, দঃ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং আমেরিকা।

কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেড (KDSAL)– এ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ৬৫০ জন কর্মচারী আছে।

>আর্থিক প্রতিবেদনঃ
KDSAL-এর ব্যবসায়িক লেনদেন (টার্নওভার) বাড়লেও ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে কেডিএস এক্সেসরিজের মুনাফার পরিমাণ কম হয়েছে। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত নিট ক্যাশ ফ্লো (নগদ প্রবাহ) না থাকার কারণে নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতাও ছিল না কোম্পানিটির। আবার ২০১৪ সালে কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো বাড়লেও মুনাফায় তেমন পরিবর্তন হয়নি।

২০১২ সালে KDSAL-এর টার্নওভারের পরিমাণ ছিল ১৫১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১২ সালের তুলনায় কোম্পানিটির টার্নওভার বেড়েছে ৮.৬১ শতাংশ। কিন্তু টার্নওভার বাড়লেও কমেছে মুনাফার পরিমাণ।

২০১২ সালের ১১ কোটি টাকার মুনাফার বিপরীতে ২০১৩ সালে তা হয়েছে সাড়ে ৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে মুনাফার পরিমাণ কমেছে ২২.৭২ শতাংশ। টার্নওভার বাড়ার পরও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আয়ের ক্ষেত্রে। অপরদিকে ২০১৪ সালেও কোম্পানিটির আয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি। ২০১৪ সালে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

অপরদিকে KDSAL-এর ২০১৩ সালে অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল শেয়ারপ্রতি ৪১ পয়সা। আর নীট ক্যাশ ফ্লো ছিল প্রায় ২০ পয়সা। ফলে ২০১৩ সালে কোম্পানিটির ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতাও ছিল না। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো শেয়ারপ্রতি ৪.৬৭ টাকা হলেও নীট ক্যাশ ফ্লো হয়েছে মাত্র ৭ পয়সা।

২০১২ সালে করপূর্ববর্তী মুনাফার ওপর ১৭.৪৯ শতাংশ হারে কর সঞ্চিতি রাখে KDSAL কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০১৩ সালে কমিয়ে রাখা হয়েছে ১৪.১৭ শতাংশ, যাতে ২০১৩ সালে কর সঞ্চিতিজনিত ব্যয় কম হয়েছে। ২০১২ সালের থেকে ২০১৩ সালে টেক্স প্রদানের পরিমাণও বেশি। তারপরও ২০১৩ সালে কর সঞ্চিতি হার কম রাখা হয়।

উল্লেখ্য, আইপিও পূর্ববর্তী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা। আইপিও’র পর কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫২ কোটি টাকা। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী কেডিএস এক্সসরিজের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৮৫১ টাকা।

এছাড়া স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৬ কোটি ৫৮ লাখ ৭ হাজার ৪৪১ টাকা। এক্ষেত্রে কোম্পানির মোট ঋণ ১০০ কোটি ৭৫ লাখ ৫১ হাজার ২৯২ টাকা। এর পাশাপাশি আইপিও’র মাধ্যেমে উত্তোলিত অর্থের প্রায় ৩০ শতাংশই (২৯.১৭) ব্যাংক লোন পরিশোধ করার জন্য।

গত ২০১০ সালে শ্রমিকদের লাভের অংশীদার করতে Workers Profit Participation Fund (WPPF) তৈরি হয়েছে। যেখানে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ২ কোটি ৭০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৫ টাকা জমা হয়েছে। কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান Sky Securities Ltd.

২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে KDSAL-এর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (NAV) দাঁড়িয়েছে ১৯.৬৩ টাকায়। একই বছরে শেয়ারপ্রতি আয় (EPS) করেছে ২.১৪ টাকা করে।

কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৩ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৩২.৭৭% বোনাস প্রদান করেছে।

>আইপিও তথ্যাবলিঃ
কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেড (KDSAL) -এর আইপিও আবেদন শুরু হবে আগামি ৯ আগস্ট, ২০১৫ রবিবার থেকে। আবেদন জমা নেবার শেষ তারিখ ২০ আগস্ট, ২০১৫ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। আর প্রবাসী, বিদেশী বা অনাবাসিক বিনিয়োগকারীদের জন্যও একই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে ১ কোটি ২০ লাখ সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ২৪ কোটি টাকা উত্তোলন করবে কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেড। এজন্য ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সাথে ১০ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ২০ টাকা মূল্যে শেয়ার ইস্যু করবে কোম্পানিটি।

ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এই টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। আইপিও থেকে উত্তোলিত টাকা দিয়ে ৩ নং প্যাকেজিং ইউনিট স্থাপন ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা হবে।

আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ মূলত বিভিন্ন ধরণের শৈল্পিক কার্টনের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যয় হবে। এ অর্থের ৬২.৫ ভাগ বা ১৫ কোটি ব্যয় হবে মেশিনারিজ কেনায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ বা ৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে।

>মূলধন ও শেয়ার সংখ্যাঃ
বর্তমানে কোম্পানির অনুমোদিত মুলধন ২০০ কোটি টাকা। আইপিও পূর্ববর্তী পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা। আইপিওর পর মূলধন বেড়ে হবে ৫২ কোটি টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা হবে ৫ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে ফ্লোটিং শেয়ার বা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে থাকা শেয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ।

কোম্পানির পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ারের লক-ইন থাকবে লেনদেন শুরুর তারিখ থেকে ৩ বছরের জন্য । এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারের লক-ইন থাকবে লেনদেন শুরুর তারিখ থেকে ১ বছরের জন্য।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.