ইস্যু মুল্যের নিচে ১২ কোম্পানি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বর্তমান বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। প্রতিনিয়তই বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সে ক্ষতির অনেকাংশে হয়েছে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দিয়ে কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির কারণে। যে দরে কোম্পানিগুলো বাজারে প্রবেশ করেছে তার চেয়ে কম দরে শেয়ার লেনদেন হচ্ছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১২টিতে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ লেনদেন শুরুর পর বছর না ঘুরতেই বরাদ্দ মূল্যের (ইস্যু মূল্য) নিচে নেমে আসছে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর।
কোম্পানিগুলো হলো: আরডি ফুড, জাহিন টেক্সটাইল, বারাকা পাওয়ার, ইউনিক হোটেল, জিবিবি পাওয়ার, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ওরিয়ন ফার্মা, আরগন ডেনিমস, হামিদ ফেব্রিক্স, ফারইস্ট নিটিং এবং দ্য পেনিনসুলা চিটাগাং লিমিটেড।
ডিএসই সুত্রে জানা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর বরাদ্দ মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। যা তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮ টাকা ইস্যু মূল্যের আরডি ফুড তালিকাভুক্ত হলেও বর্তমানে এর শেয়ার দর ১৪.৩০ টাকা। জাহিন টেক্সটাইলের বর্তমান শেয়ার দর ২২.৯০ টাকা। অথচ কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ২৫ টাকায় বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ৬০ টাকা ইস্যুমূল্যের বারাকা পাওয়ারের বর্তমান শেয়ার দর ৩৩.৭০ টাকা। এছাড়া ৬৫ টাকার ইউনিক হোটেলসের শেয়ার দর ৫২.২০ টাকা, ৪০ টাকার জিবিবি পাওয়ারের শেয়ার দর ১৮.৮০ টাকা, ২৫ টাকার জিএসপি ফাইন্যান্সের শেয়ার দর ১৩.২০ টাকা, ২৫ টাকার প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার দর ১৯.৪০ টাকা, ৬০ টাকার ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার দর ৩৮.৮০ টাকা, ৩৫ টাকার আরগন ডেনিমসের শেয়ার দর ২৭.২০ টাকা, ৩৫ টাকার হামিদ ফেব্রিক্সের শেয়ার দর ২৬.৪০ টাকা, ২৭ টাকার ফারইস্ট নিটিংয়ের শেয়ার দর ২৫.৭০ টাকা এবং ৩০ টাকার দ্য পেনিনসুলা চিটাগাং লিমিটেডের শেয়ার দর ২০.৬০ টাকায় অবস্থান করছে।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানির দর বরাদ্দ মূল্যের প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এমনকি অভিহিত মূল্যের নিচেও নেমে আসার ঘটনাও ঘটেছে। বরাদ্দ মূল্যের নিচে নেমে আসা সব কোম্পানিই প্রিমিয়াম মূল্যে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে।
এদিকে ইস্যুদরের নিচে নেমে আসায় এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের লক্ষ্যে যারা এ সব কোম্পানির শেয়ার ধরে রেখেছেন তাদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মৌলভিত্তির দিক থেকে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও অনেক কোম্পানিকে প্রিমিয়ামের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। রাজনৈতিক চাপেও অনেক কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বাধ্য হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। এ ছাড়া বেশ কিছু কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পরও এসব কোম্পানির মুনাফা বাড়েনি বরং কমেছে। অধিকাংশ কোম্পানিই ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে। কিন্তু ব্যাংকঋণ পরিশোধ করার পরও কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়েনি। এর ফলে কোম্পানিগুলোর আর্থিক হিসাব বিবরণীর স্বচ্ছতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগোরীরা।
এমতাবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পোষাতে ফেসভ্যালুতে কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়া দরকার বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু/ম.সা