ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি: ঋণগ্রহীতার কান্না
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: সিলেট অপুলেন্স (প্রা:) লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো: ময়নুল ইসলাম সিলেটে আবাসিক হোটেলের ব্যবসা করার জন্য ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেন। কিন্তু ব্যাংকটির কিছু উর্ধ্বতন কর্মকর্তা চেক জালিয়াতি করে গ্রাহকের প্রাপ্য ঋণ থেকে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তিন বছর ধরে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দ্বারে ঘুরে কোন প্রতিকার না পেয়ে স্বর্বশান্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কাছে এর বিচার চান।
২৯ নভেম্বর রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৫ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মো: ময়নুল ইসলাম কান্না বিজড়িত কন্ঠে তার তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন এবং গভর্নরের কাছে এর সুষ্ঠু প্রতিকার চান। যাতে ভবিষ্যতে তার মতো অন্য কাউকে এভাবে স্বর্বশান্ত হতে না হয়।
এ সময় ময়নুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে আবদেন করি। কিন্তু কোন পদক্ষেপ না নিয়ে তারা আমাকে শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন। বরং এক জানুয়ারি, ২০১৩ থেকে ৩০ জুন, ২০১৫ পর্যন্ত প্রদত্ত ঋণের সুদ বাবদ দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে আমি চিঠি পাই।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকটি এ বিষয়ে সময়ে সময়ে আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতী প্রদর্শন করে। এমনকি তারা আমার নামে আদালতে মামলা পর্যন্ত করে। এ মামলার কারণে গত চার-পাঁচ মাস আমাকে ব্যাপক হয়রানির মধ্যে যেতে হয়েছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের কারণে ব্যাংকটি মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে।
জানা যায়, মো: ময়নুল ইসলাম ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফেরেন। দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে তিনি সিলেট অপুলেন্স (প্রা:) লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। ২০১১ সালের শেষের দিকে সিলেটে একটি আবাসিক হোটেল করার জন্য তিনি ইসলামি শরিআহ ভিত্তিক ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের সিলেট শাখায় সাত কোটি টাকা ঋণ চেয়ে আবেদন করেন। ব্যাংকটি প্রাথমিকভাবে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে এবং বাকী টাকা পরবর্তীতে পরিশোধ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ময়নুল ইসলাম বার বার ব্যাংকে ধর্না দিয়েও বাকী টাকা পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে তড়িঘড়ি করে ব্যাংক চার কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে এবং তিন কোটি ৫ লাখ টাকা তার হিসাবে স্থানান্তর করে। কিন্তু এ টাকা তিনি আর উত্তোলন করতে ব্যর্থ হন। কারণ ঋণ গ্রহণের সময় তিনি ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে নিজের স্বাক্ষরিত কিছু চেক ব্যাংক শাখাটিতে জমা রেখেছিলেন। এর মধ্যে চারটি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ মঞ্জুরির দিনই ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক এবং আঞ্চলিক প্রধান তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর, ২০১২ তারিখে সিলেট অপুলেন্স লিমিটেডের চলতি হিসাবে তিন কোটি ৫ লাখ টাকার ঋণ ক্রেডিট করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ময়নুল ইসলামের অগোচরে একই দিনে ব্যাংকিং সময়ের শেষে এক ঘন্টার মধ্যে শাখায় জামানত হিসেবে গচ্ছিত চারটি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে তিন কোটি টাকা শাখার ব্যবস্থাপক কর্তৃক উত্তোলন করা হয়। পরবর্তীতে এ টাকা কতিপয় খেলাপী ঋণ হিসাবসমূহে উইনডো ড্রেসিং করে জমা দিয়ে ঋণ সমন্বয়ে দেখানো হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের সিলেট শাখা ব্যবস্থাপক এবং আঞ্চলিক প্রধানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-কে নির্দেশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, এ ধরণের ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এ ধরণের ঘটনা ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিজের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। তাই বালাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার আবেদন জানান তিনি।
এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় গ্রাহকের হয়রানি ও ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদান ব্যাংকিং খাতের একটি অঙ্গিকার হওয়া উচিত। আর এ অঙ্গিকার পূরণে সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বদ্ধপরিকর।
শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু/ম.সা