আইপিওতে কোটা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আইপিও নতুন বিধানের খসড়া অনুযায়ী, প্রিমিয়াম নিতে চাইলে প্রতিটি কোম্পানিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। আর এই পদ্ধতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের সংরক্ষিত কোটার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
নতুন আইনের খসড়া অনুযায়ী, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হবে। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস,২০০৬ অনুযায়ী,৫০০ কোটি টাকার নিচে মূলধন উত্তোলনের ক্ষেত্রে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা ৬০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কোটা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
অর্থাৎ প্রিমিয়াম নেয়া কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের নির্ধারিত কোটা হারাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০১৫ এর খসড়া জনমত জরিপের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত দেয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের আগামী ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়ে জানাতে হবে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু রুলস) ২০০৬ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, আইপিও’র বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলনের ক্ষেত্রে ইলিজিবিল বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৮০ শতাংশ (এর মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১০ শতাংশ ও প্রবাসী বিনিয়োগকারী ১০ শতাংশ) কোটা সংরক্ষণ করা হবে। ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলনের ইলিজিবল ইনভেষ্টর ৩০ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৭০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত হবে। ১০০ থেকে ৫০০ কোটির ক্ষেত্রে ইলিজিবল ইনভেষ্টর ৪০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হবে।
কিন্তু পাবলিক ইস্যু রুলস,২০১৫ এর খসড়া অনুযায়ী, বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে ইলিজিবল বিনিয়োগকারীদের জন্য ৭০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইলিজিবল ইনভেষ্টর বলতে ১২ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে বোঝানো হয়। এগুলো হলো : মার্চেন্ট ব্যাংক এবং পোর্টফলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড, স্টক ডিলার, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টম্যান্ট ফান্ড ম্যানেজার,অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের পোর্টফলিও রয়েছে,স্বীকৃত পেনশন ফান্ড এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং বিএসইসির অনুমোদিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন বা পরিমার্জন সাপেক্ষে আইনটি চূড়ান্ত করবে বিএসইসি। আর এই আইনটি সংশোধনের জন্য বিনিয়োগকারীরা মতামত জানানোর জন্য ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবেন। এরপর এটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ ডিসেম্বর বিএসইসির ৫৬১তম কমিশন সভায় ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০১৫’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
বিএসইসি (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫ তে উল্লেখ করা হয়, পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ অথবা অভিহিত মূল্যে ১৫ কোটি টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ পরিমাণ হবে সে পরিমাণ অথবা পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা রয়েছে সে কোম্পানি আইপিও অংশ গ্রহণের আবেদন করতে পারবে। যেসব প্রতিষ্ঠান ফেসভ্যালুতে আইপিও আবেদন করতে চাইবে তাদের জন্য ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি এবং যেসব প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম নিয়ে আবেদন করতে চাইবে তাদের জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
প্রত্যেক কোম্পানিকে রোড শো’র আয়োজন করতে হবে। রোড শোতে যে সব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করবে তাদের মতামত এবং পর্যবেক্ষণসহ ইস্যুয়ার কোম্পানি প্রসপেক্টাসের কপি এবং আবেদনপত্র বিএসইসি এবং স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করতে হবে। তবে প্রসপেক্টাসে ইস্যুয়ারের সব ধরনের তথ্য থাকতে হবে এবং শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণও উল্লেখ থাকতে হবে। তবে কত দরে এবং কি পরিমাণ শেয়ার ইস্যু করা হবে তা উল্লেখ করা যাবে না।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা জন্য নির্ধারিত কোটার শেয়ার সর্বনিম্ন যে দরে বিডিং শেষ করবে সেটি হবে কোম্পানির ‘কাট অফ প্রাইস’। কাট অব প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ (নিকটতম পূর্ণসংখ্যা) কম দরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থাৎ প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) জন্য ইস্যুমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যেমন কোনো কোম্পানির বিডিংয়ে ইস্যু মূল্য ৫৮ টাকা নির্ধারিত হলো। সেক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৫.৮০টাকা কমে ৫২ টাকায় আইপিও আবেদন করবে।
আইপিওতে আরও যে সব শর্ত রয়েছে এগুলোর মধ্যে- প্রসপেক্টাসে উল্লেখকেরা নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরিশোধিত মূলধন বা্ড়াতে পারবে না, বিএসইসির অডিটর প্যানেল দ্বারা আর্থিক প্রতিবেদন নীরিক্ষা করতে হবে, নিয়মিত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে, করপোরেট গর্ভন্যান্স গাইড লাইন পরিপালন করতে হবে, পুঞ্জীভুত লোকসান থাকতে পারবে না্, সম্পদ পূন:র্মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কমিশনের গাইড লাইন অনুযায়ী করতে হবে। ফিক্সড প্রাইজ মেথডে আবেদনে আরও যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে নীট গ্রোথ পজেটিভ হতে হবে, কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ শেয়ার অবলেখকদের গ্রহণে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতির জন্য অতিরিক্ত আরও যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তারমধ্যে রয়েছে-পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে কমপক্ষে ১৫০ শতাংশ সম্পদমূল্য বেশি থাকতে হবে, গত ৩ বছর ধরে বাণিজ্যিক উৎপাদনে থাকতে হবে, কমপক্ষে বিগত দুই বছরে মুনাফায় থাকতে হবে, কমপক্ষে পূর্ববর্তী ২ বছরে নীট কারেন্ট অ্যাসেট এবং নীট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পজেটিভ হতে হবে। ইস্যু ম্যানেজার এবং রেজিস্টার টু দ্য ইস্যু আালাদা হতে হবে। ইস্যুকৃত শেয়ারের কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ আন্ডাররিটেন হবে হবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/অ/ম.সা