আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ জানুয়ারী ২০১৬, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

বেসরকারিভাবে তেল আমদানি:বিদ্যুৎ খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে

oilশেয়ারবাজার রিপোর্ট : সরকার বেসরকারিভাবে ডিজেল ও ফার্নেস তেল আমদানির সুযোগ দিচ্ছে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে। এতে বেসরকারি কোম্পানিগুলো কম খরচে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। ফলে কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়বে। তাই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে বেশি রিটার্ন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। কিন্তু সরকার এখনও বিশ্ববাজারের সাথে জ্বালানী তেলের মূল্য সমন্বয় করেনি। তাই দেশের বাজারে এখনও বেশি দামে জ্বালানী তেল কিনতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে। এজন্য বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর কয়েকটি নিজেরাই তেল আমদানির অনুমোদন চেয়েছে। সরকারও তাদেরকে অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি তেল আমদানির বিদ্যমান প্রক্রিয়া পরিবর্তন আনছে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে বিদুৎ ও জ্বালানী খাতে ১৮টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। সম্প্রতি আরও একটি বিদ্যুৎ কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু বিদ্যুৎ কোম্পানি পুঁজিবাজারে শেয়ার ছেড়ে মূলধন বাড়ানোর আবেদন করেছে।

জানা যায়, বর্তমানে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিপিসিকে প্রতিলিটার ডিজেল ও ফার্নেস তেল বাবদ ৬৬ টাকা ৭২ পয়সা পরিশোধ করছে। সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এ তেল আমদানি করলে প্রতি লিটারের মূল্য দাঁড়াবে ৫৪ টাকা ১২ পয়সা। লিটার প্রতি সাশ্রয় হবে ১২ টাকা ৬০ পয়সা। তাই বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নিজেরাই সরাসরি ডিজেল ও ফার্নেস তেল আমদানি করার অনুমোদন চাইছে।

পিডিবির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৪১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ডিজেল ও ফার্নেস তেলে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি ডিজেল চালিত ও ৩১টি  ফার্নেস তেল চালিত। ৪১টির মধ্যে ১৬টি পিডিবি বা সরকারি কোম্পানি পরিচালিত। বাকি ২৫টি বেসরকারি।

এ প্রসঙ্গে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক জানায়, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বিদ্যুৎ খাতের জন্য ইতিবাচক। এতে বিদ্যুৎ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীর আগ্রহ বাড়বে। তাছাড়া সরকার নিজেও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সূত্র জানায়,  জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের উপসচিব ফারজানা মমতাজ স্বাক্ষরিত পৃথক আদেশে তিনটি কোম্পানিকে ফার্নেস তেল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের আলীরটেকে স্থাপিত ৫২ দশমিক ২ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত্ কেন্দ্রের জন্য সিনহা পিপলস এনার্জি লিমিটেড এক বছরে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করবে। চট্টগ্রামে অবস্থিত ১০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রের জন্য বার্ষিক ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস তেল আমদানি করবে ইসিপিভি চিটাগাং লিমিটেড। এছাড়া ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বছরে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস তেল আমদানি করবে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড।

সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে স্থাপিত ৩০৫/৩৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিদেশ থেকে সরাসরি ডিজেল-ফার্নেস তেল আমদানির অনুমোদন চেয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ঐ কেন্দ্রের বিপরীতে বছরে ৩ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। সামিটকে ওই পরিমাণ তেল আমদানির চূড়ান্ত অনুমতি এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদানের বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত ২৫ নভেম্বর বিদ্যুত্ বিভাগে চিঠি দিয়েছে পিডিবি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমার কারণে বেসরকারি খাতে তেল আমদানির যৌক্তিকতা আরও বড় আকারে দেখা দিয়েছে। এ দাম কমার কারণে দেখা যায়, সরাসরি বেসরকারি মালিকদের আমদানিকৃত তেল দিয়া উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে (গত বছরের সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী) ৭ থেকে ৮ টাকা। আর বিপিসি থেকে সরকার নির্ধারিত দামে তেল কিনলে দাম পড়ে ১৪-১৬ টাকা। সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে জ্বালানি তেলের দাম সামঞ্জস্য না করাই এর মূল কারণ। তবে সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্তের কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেমন লাভ করবে, তেমনি এই খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গতি আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, তেল আমদানির প্রক্রিয়াকে আমরা ঢেলে সাজিয়েছি। বিদ্যুৎ  খাতকে আরো গতিশীল করতে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অনেক কোম্পানি নিজেরাই তেল এনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করতে চাইছে। এক্ষেত্রে আমরা বাধা দিব না। সরকার এগুলো অনুমোদন দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে যারা আবেদন করেছে, তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে সামিট গ্রুপের সামিট বরিশাল পাওয়ার লিমিটেড ও সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেড-২’র জন্য জ্বালানি তেল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। খানজাহান আলী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডও বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। এর আগে ২০১২ সালে ভাড়াভিত্তিক ১১টি বিদ্যুত্ কেন্দ্রকে প্রয়োজনীয় তেল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার।

শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.