শেয়ারবাজারে নীতি সহায়তার সুফল যথেষ্ট না: বিশ্ব ব্যাংক
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : ২০১০ সালের ধসের পর থেকে বাজার চাঙ্গা করতে বাংলাদেশ সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সুফল যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট, এপ্রিল-২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হ্রাসের মতো নীতি সহায়তার সুফলও টেকসই ছিল না।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলে, সময়ে সময়ে কিছু ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও প্রায় ৯ মাস ধরে নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। ২০১৫ সালের জুন-জুলাইয়ে বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা যায়। এর মূলে ছিল তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হ্রাস, সরকারি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার শতকরা ২ পয়েন্ট কমানো ও জাতীয় বাজেটের নথিপত্রে সামষ্টিক অর্থনীতির একটি ইতিবাচক চিত্র। আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চিত্রটি ভালোই ছিল।
তবে অক্টোবর থেকে উত্থান-পতনের একটি ধারার মধ্য দিয়ে নিম্নমুখী প্রবণতার শুরু। এ সময়ে শেয়ারবাজারে লেনদেনও কমে যায়, যা বিনিয়োগকারীদের সতর্কতারই প্রতিফলন। সে নিম্নমুখী প্রবণতা শুরুর আগে আগস্টে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৮৭৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়। এর পর তিন মাসের ব্যবধানে সূচকটি প্রায় ৫০০ পয়েন্ট কমে যায়। ১১ নভেম্বর ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৩৭২ পয়েন্টে নেমে আসে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের নিম্নমুখী প্রবণতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। বছর শেষে দেখা যায়, ডিএসইর বাজার মূলধন ১২ মাস আগের তুলনায় ৪ শতাংশ কমে যায়। অথচ এ সময়ের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সংখ্যা ৫৪৬ থেকে ৫৫৯-এ উন্নীত হয়।
তুলনামূলক স্থিতিশীল ও ইতিবাচক সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে হিসাব বছর শেষে ভালো করপোরেট ঘোষণা ও পুঁজিবাজারবান্ধব মুদ্রানীতির প্রত্যাশায় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারবাজারে আবারো ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা যায়, যা প্রায় এক মাস অব্যাহত ছিল। বিনিয়োগ বাড়াতে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সুদের হার দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমানোর পরও ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ারের মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর যথেষ্ট আস্থার অভাবেই ইতিবাচক মুদ্রানীতি প্রতিবেদনটি তখন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। এ কারণে এখানে দীর্ঘমেয়াদে ইকুইটি বিনিয়োগে আগ্রহ কম থাকবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে সাময়িকীটি।
২০১০ সালের বাজার ধসের পর থেকে বিভিন্ন নীতি সহায়তার সুফল সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজার চাঙ্গা করতে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে কমই সফল হয়েছে। ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে নিট বিদেশী বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে যায়। বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা গেল বছর (বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে) প্রচুর শেয়ার বিক্রি করে। আগের দুই বছরে এসব শেয়ারে তাদের ভালো মুনাফা হয়।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ