আইপিও’র অর্থে সালভোর মহাকেলেঙ্কারী, পর্ব:১
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আইপিও’র অর্থ দিয়ে উৎপাদন না বাড়িয়ে ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা, মালিকানায় থাকা ব্যাক্তিদের কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়া, দুই স্টক এক্সচেঞ্জে দুই ধরনের প্রসপেক্টাস দাখিল, ভুয়া রিসিট দেখিয়ে সম্পদ বাড়ানো, কর ফাঁকি, ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিসহ কি কেলেঙ্কারী করেনি সালভো কেমিক্যালে!
তালিকাভুক্তির পর থেকে ক্রমাগত অনিয়মে কোম্পানির শেয়ারদর তলা থেকে তলানিতে নেমেছে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায়। আর এর মধ্যে পরিচালকরা ক্রমান্বয়ে মালিকানাধীন শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে এ কোম্পানির নানা অনিয়ম হওয়া স্বত্ত্বেও নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যা পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ পরিপন্থী বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০১১ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সালভো কেমিক্যাল প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যেমে সাধারন বিনিয়োগকারীদের থেকে ২৬ কোটি টাকা উত্তোলন করে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের কারণ হিসেবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ, উৎপাদন তিনগুনের চাইতেও বেশি করা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করাসহ চলতি মূলধন খাতে খরচ করা হবে বলে উল্লেখ করে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করা আইপিও প্রসপেক্টাস বিশ্লেষনে দেখা যায়, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ও ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে নেওয়া কোম্পানির যথাক্রমে ৫২ লাখ টাকা ও ২ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হবে আইপিও’র অর্থ হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে। আবার একই সময়ে কোম্পানি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যে প্রসপেক্টাস দাখিল করেছে সেখানে উল্লেখ রয়েছে প্রিমিয়ার লিজিং ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের যথাক্রমে ৮৬ লাখ ও ৫২ লাখ টাকার ঋণের অর্থ পরিশোধ করা হবে অর্থ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই।
আবার, ডিএসই’তে দেওয়া খরচের খাতের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত খাতে ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা খরচ করা হবে যা অর্থ পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। উৎপাদন ৩০ মেট্রিক টন থেকে দৈনিক ১০০ মেট্রিক টন করার জন্য প্লান্ট বসানো খাতে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ হবে। এ উৎপাদন বাড়ানোর কাজ অর্থ হাতে পাওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে করা হবে। এর পাশাপাশি ৪ কোটি টাকা চলতি মূলধন রেখে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রকল্পের শেড তৈরী ও কাঁচামালের শেড তৈরীর খাতে বাকি ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
অন্যদিকে সিএসই’তে দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, উৎপাদন বাড়ানোর কাজে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচের হিসাব দেখানো হয়েছে। স্টোর ও কাঁচামালের শেড তৈরীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকাই। কিন্তু চলতি মূলধন খাতে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ব্যায়ের হিসাবে এমন গড়মিল থাকলেও কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই রহস্যজনকভাবে আইপিও ইস্যু উতরে যায় কোম্পানি।
প্রিমিয়ার লিজিংয়ের যে ৮৬ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করার কথা ডিএসই’তে উল্লেখ করা হয়েছে, সে ঋণকে ৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সিএসই’তে। আর এর মাসিক ইন্সটলমেন্ট দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৯০ টাকা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আইপিও’র অর্থ থরচের সময়সীমা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেলেও কোম্পানির আয়ে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির আয় আগের তুলনায় কমেছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ উৎপাদন ৩০ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ১০০ মেট্রিক টন করার কথা উল্লেখ করলেও কোম্পানির বর্তমান দৈনিক উৎপাদন ৪৫ থেকে ৫৫ মেট্রিক টনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এদিকে, ছয়টি প্লান্ট তৈরী করার কথা থাকলেও কোম্পানির বর্তমানে উৎপাদন সক্ষম প্ল্যান্ট রয়েছে মাত্র দুটি।
এ প্রসঙ্গে কোম্পানির চেয়ারম্যান সালমান ওবায়দুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোম্পানির অ্যাকাউন্টস বিভাগ ও কোম্পানি সচিব বিভাগ এ ব্যাপারে জানাতে পারবে’। প্রধান হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা লিটন কুমারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। পরবর্তিতে সালমান ওবায়দুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও আর কোনো মন্তব্য করেননি।
সালভো কেমিক্যাল নিয়ে পরবর্তী পর্বে পড়ুন- ‘নেই কর্পোরেট গভর্নেন্স, লাভের গুড় খাচ্ছে পিপড়া’।
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ/ম.সা