ইউনাইটেড এয়ারের নতুন জালিয়াতি!
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: জালিয়াতির নতুন পন্থা অবলম্বন করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড এয়ার। প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে ৪০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পাওয়ার পর এবার ইউনাইটেড এয়ার ওই শেয়ারে তিন বছরের লক-ইন প্রত্যাহার চেয়েছে।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের করা এক আবেদনে বিএসইসি’কে জানানো হয়, দেশের বিমান খাতে নতুন এ বিনিয়োগে তিন বছরের লক-ইন দেওয়া হলে তা বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। তাই বাকি দুই কোম্পানির ওপর এক বছরের লক ইন দেওয়া হলেও সুইফট এয়ার কার্গোর তিন বছরের লক-ইন প্রত্যাহার করা হোক। প্রসঙ্গত, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি না করতে পারার সময়সীমাকে লক-ইন বলা হয়। নতুন পাবলিক ইস্যু আইনের অধীনে উদ্যোক্তা পরিচালকদের জন্য লক-ইনের সময়সীমা তিন বছর নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে।
ইউনাইটেড এয়ারের দাবি অনুযায়ি, সুইফট এয়ার কার্গো যে প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনতে যাচ্ছে তাতে কোনো ধরনের লক-ইন প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। অর্থাৎ বাজারে আসার প্রথম থেকেই শেয়ার বিক্রির অনুমতি চাচ্ছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। অথচ গত মার্চ থেকে বেবিচকের (বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) পাওনা পরিশোধ না করায় কোম্পানির বিমান উড়তেই পারছে না। এর মধ্যে রয়েছে কর্মীদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বিশাল অঙ্কের পাওনা। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের মধ্যেও রয়েছে আভ্যন্তরিন কোন্দল।
এদিকে, কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনছে যে কোম্পানিগুলো তার মধ্যে টিএসি এভিয়েশন মালিকানায় রয়েছেন ইউনাইটেড এয়ারেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী। প্লেসমেন্ট শেয়ারে এ কোম্পানি ও ফিনিক্স এয়ারক্রাফট লিজিং লক-ইন রয়েছে মাত্র ১ বছরের। বাকি সিঙ্গাপুরের নামসর্বস্ব কোম্পানি সুইফস এয়ার কার্গো নামসর্বস্ব কোম্পানিই কিনতে যাচ্ছে কোম্পানির অধিকাংশ নতুন প্লেসমেন্ট শেয়ার। এ কোম্পানি প্লেসমেন্টের মাধ্যেমে প্রায় ৩১২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
এর মধ্যে সুইফট এয়ার কার্গো নামের প্রতিষ্ঠানটির কার্যত কোনো কার্যক্রম চালু নেই। কোম্পানির ওয়েবসাইটে মাত্র দুটি বিমানের প্রসঙ্গে উল্লেখ থাকলেও ওই দুটি বিমানও অকার্যকর। গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ান বিমান কর্তৃপক্ষ বাতিল তিনটি বিমানে মালিকানা খুজতে গিয়ে প্রচারণা চালানোর সময় বিমান তিনটির মালিকানা দাবি করে সুইফট এয়ার কার্গো। এমনকি সিঙ্গাপুরে এয়ার কার্গো সেবা দানকারী ফ্রাইট এজেন্টদের তালিকায়ও কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের তিনশ কোটি টাকা বিনিয়োগকেও ভালো চোখে দেখছেন না বাজার বিশ্লেষকরা।
ইউ্নাইটেড এয়ারের অতীত ঘেটে দেখা যায়, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের পর থেকেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোম্পানিকে দূর্বল করে নিজেদের মালিকানায় থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এবার নতুন ফর্মূলা নিয়ে আসা তাসবিরুল বৈদেশিক কোম্পানির নাম ভাঙ্গিয়ে একইভাবে পরবর্তিতে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার পায়তারা করছেন- বলে আশঙ্কা করছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা।
উল্লেখ্য, কমিশনের ৫৭৫তম সভায় ইউনাইটেড এয়ারকে ৪০ কোটি ৮ লাখ ৮ হাজার ৮০০টি সাধারণ শেয়ার অভিহিত মূল্যে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৪০০ কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের সুইফট এয়ার কারগো, ফিনিক্স এয়ারক্র্যাফট লিজিং ও টিএসি অ্যাভিয়েশন ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ার কিনবে। এরমধ্যে সুইফট এয়ার কার্গোর প্রাপ্য শেয়ার তিন বছর, ফিনিক্স এয়ারক্রাফট এবং টিএসি অ্যাভিয়েশন লিমিটেডের প্রাপ্য শেয়ার এক বছরের জন্য লক-ইন থাকবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/ওহ