ব্যাড ডেলিভারির কবলে বিনিয়োগকারীরা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: শেয়ার ক্রয়ের পর কোম্পানির অফিসে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে নিজেদের নাম নিবন্ধন করতে ব্যাড ডেলিভারির কবলে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। মূলত ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে অবস্থানরত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এই ধরণের ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূলত ২টি কপি থাকে। একটি বিনিয়োগকারীর কাছে অন্যটি কোম্পানির নিকট লিপিবদ্ধ থাকে। উভয় কপিতেই সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর সাক্ষর এক হয়ে থাকে। বিনিয়োগকারী যদি অন্য কারো নিকট শেয়ার হস্তান্তর করতে চায় তাহলে হস্তান্তরযোগ্য শেয়ারের মধ্যে তার কোম্পানিতে লিপিবদ্ধ স্বাক্ষরের মতো একই স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়। তাহলে ক্রেতা শেয়ার কিনে পরবর্তীতে কোম্পানিতে নিজের নাম লিপিবদ্ধ করতে পারে। কিন্তু দেখা গেছে বর্তমানে অধিকাংশ কাগুজে শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে বিক্রেতার স্বাক্ষরের সঙ্গে কোম্পানিতে লিপিবদ্ধ স্বাক্ষরে অমিল রয়েছে। এ ধরণের ব্যাড ডেলিভারির ফলে বিনিয়োগকারীরা নগদ টাকা দিয়ে শেয়ার কিনলেও পরবর্তীতে কোম্পানির কাছে নিজের নাম লিপিবদ্ধ করতে পারছেন না।
মূলত দীর্ঘদিন ধরে ওটিসিতে কাগুজে শেয়ার আটকে থাকার ফলে এ ধরণের সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এজন্য এ ব্যাপারে যুগপোযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে বলে মনে করেন তারা। জানা গেছে, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের ওপর প্রণীত ওটিসি আইন ২০০১-এর নিয়মাবলী বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ পরিপন্থী হিসেবে পরিণত হয়েছে। বিএসইসির বিধি লঙ্ঘন করায় বেশকিছু কোম্পানিকে ওটিসিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওটিসিতে পাঠানোর নামে কোম্পানির পাশাপাশি কার্যত বিনিয়োগকারীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ওটিসিতে অবস্থান করা কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনে তীব্র ভোগান্তির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে যুগোপযোগী আইন প্রনয়ণের দাবি জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে শেয়ার লেনদেনে তীব্র ভোগান্তির নেপথ্যে ওটিসি আইন ২০০১এর কিছু ধারাকে দায়ী করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, ওটিসি মার্কেটে অবস্থানরত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার কাগুজে। আর কাগুজে শেয়ার লেনদেনের জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে ভোগান্তির মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়। অথচ শাস্তিস্বরূপ পাঠিয়ে দেয়া এ মার্কেটের কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনের সুযোগ থাকা দরকার বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
জানা যায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ওভার দ্য কাউন্টার) রুলস ২০০১, ৬ এর ৪ ও ৫ ধারায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয় অথবা বিক্রি করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ হাউজে নির্ধারিত ফরম পূরণ করবে। সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ হাউজের পক্ষ থেকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ওটিসি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার ফরম পূরণ করতে হবে। অতঃপর পরবর্তী ২ কার্যদিবসের মধ্যে সে কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজারের নিকট পাঠাতে হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতা অথবা বিক্রেতার নাম নিবন্ধিত করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার ক্রয় অথবা বিক্রীত শেয়ার হস্তান্তরের যাবতীয় কার্য সম্পাদান করবে এবং পরবর্তী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা অথবা বিক্রেতাকে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ হাউজের মাধ্যমে হস্তান্তর করবে। অর্থাৎ নিয়মানুযায়ী একটি কোম্পানির শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে মোট ১০ কার্যদিবস অতিবাহিত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, একটি কোম্পানির শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে হলে এতো সময়ক্ষেপণের কোনো মানে হয় না। শেয়ার হস্তান্তরের যারা মাধ্যম হিসেবে কাজ করছেন তারা ইচ্ছে করলে মাত্র ৩ কার্যদিবসের মধ্যে সমাধান করতে পারেন। এ ব্যাপারে কয়েকটি কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে এরকম সময়ক্ষেপণের বিষয়টি স্বীকার করেন। জানা যায়, তারা নিয়ম মোতাবেক কাজ করে থাকে। যদি কেউ কোনো কোম্পানির কাগুজে শেয়ার ক্রয় অথবা বিক্রি করতে চায়, তাহলে তাকে সংশ্লিষ্ট আইন মেনে এগোতে হয়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা জানান, এমনিতেই শেয়ার লেনদেনে এতো সময়ক্ষেপণ হয়। তার ওপর অনেক সময় মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে শেয়ার হাতে পাওয়া যায় না। অনেক কোম্পানির কার্যালয় ঢাকার বাইরে রয়েছে। সেক্ষেত্রে শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়া বেশকিছু কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেন। যার ফলাফল হিসেবে ব্যাড ডেলিভারির কবলে পড়তে হয় বিনিয়োগকারীদের। এ কারণে শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে এতো জটিলতা লক্ষ্য করা যায়। লেনদেন না হওয়ার ফলে এ মার্কেটটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওটিসি মার্কেটে কোম্পানিগুলোর পারফরমেন্স যাই থাকুক না কেন এ মার্কেটের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ থাকা দরকার। দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন না হওয়ায় একদিকে যেমন কোম্পানিগুলো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে, অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর পরিচালকরাও নিশ্চিন্তে আরাম আয়েশে দিনযাপন করছে। যদি নিয়মিত এ মার্কেটে কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনে সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোও গতিশীল হতো। তাই বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি লাঘবে এবং ওটিসিকে গতিশীল করতে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা