আসছে আতিউর রহমান প্রভাবিত মুদ্রানীতি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : আসছে ‘প্রবৃদ্ধি সহায়ক-বিনিয়োগবান্ধব’ মুদ্রানীতি। তবে এবারের মুদ্রানীতিতে সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের প্রভাব রয়েছে।
আগামী ২১ জুলাই চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষণা করা হতে পারে নতুন মুদ্রানীতি।সর্বশেষ মুদ্রানীতির মতোই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে মধ্যে রাখার লক্ষ্য থাকবে এতে। সেই সঙ্গে জাতীয় বাজেটের ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে মাথায় রেখেই প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি প্রণয়ণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, ২১ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি। তবে গভর্নর ফজলে কবির এখনও মুদ্রানীতি ঘোষণার চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক করেননি।
মুদ্রানীতি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, তারা যেন ২১ জুলাইকে সামনে রেখে মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শেষ করেন। এরই মধ্যে নতুন এই মুদ্রানীতি প্রণয়নের প্রায় সব কাজ শেষ করে এনেছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত গত মুদ্রানীতিতে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৪.৮০ শতাংশ। অবশ্য নির্ধারিত সময়ের ৫ মাস আগে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬.৪০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
এ কারণে সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সর্বশেষ ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার চেয়ে অন্তত ৩ শতাংশ বেশি ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হবে নতুন মুদ্রানীতিতে।
সর্বশেষ গত ১৪ জানুয়ারি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিলেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সেই মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৪.৮০ শতাংশ। আলোচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি পদত্যাগ করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আসন্ন মুদ্রানীতি গুরুত্বপুর্ণ কাজ করবে। এ জন্য আগের মুদ্রানীতিরই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে আসন্ন মুদ্রানীতিতেও।
মুদ্রানীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই মুদ্রানীতির মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ থাকবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্বাচিত (সিলেকটিভ) খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং রফতানিমুখী, উৎপাদনশীল ও পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনে আগের চেয়ে বেশি অর্থ বা ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বাইরে এরিয়া অ্যাপ্রোচ ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে নারী উদ্যোক্তা ও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের।
এদিকে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের নিচে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে পূরণ হয়েছে বাজেটের প্রত্যাশা। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫.৯২ শতাংশে নেমেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬.৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এদিকে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা বিপুল পরিমাণের অলস অর্থ কাজে লাগাতে নতুন মুদ্রানীতি সম্প্রসারণমূলক করার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরাও শুধু বড় গ্রাহকদের দিকে তাকিয়ে না থেকে এসএমই গ্রাহকদের ঋণের চাহিদা বাড়ানোর মাধ্যমে অলস অর্থ বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।
গত ৫ বছরের মুদ্রানীতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিনিয়োগ পরিবেশ স্বাভাবিক না থাকার কারণে গত ৫ বছর প্রাক্কলিত ঋণ প্রবৃদ্ধি পূরণ হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০.৮৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক কম প্রবৃদ্ধি হওয়ায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় সাড়ে ১৫ শতাংশ। এই অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যায় ৪.২৩ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১২.২৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জানুয়ারির আগে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল। সেই আলোকে জানুয়ারি-জুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে জুন নাগাদ ১৫.৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়। কিন্তু ২০১৪ সাল শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৩.৫০ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৫ শতাংশ। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও গত অর্থবছরের শেষার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য বেসরকারি খাতে সাড়ে ১৫ শতাংশ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অর্জন হয় ১৩.৬ শতাংশ।
সবর্শেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪.৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের ৫ মাস আগেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হয়। এই প্রবৃদ্ধি ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৪.৮২ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৫.১১ শতাংশ। আর মার্চ শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৫.১৬ শতাংশ। গত মে মাসের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬.৪০ শতাংশ। যা চলতি মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ২ বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে থাকে। একটি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে। সাধারণত মুদ্রার গতিবিধি প্রক্ষেপণ করে এই মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতির অন্যতম কাজগুলো হলো—-মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা, ঋণের প্রক্ষেপণের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ঋণের যোগান ধার্য করা এবং মুদ্রার প্রচলন নিয়ন্ত্রণ করা।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ