আজ: শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৫ জুলাই ২০১৬, সোমবার |

kidarkar

সিএসআর নীতিমালা তৈরি করছে সরকার

Govt_logoশেয়ারবাজার রিপোর্ট: করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) বা সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতের ব্যয় নিয়ে সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি দেশের কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে পরামর্শ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। আগামী ১ আগস্টের মধ্যে পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন মুহিত।

চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সিএসআর সম্পর্কে সম্ভবত বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নির্দেশনা আছে, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পালন করে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও (বাণিজ্যিক, শিল্প বা কৃষি খাতের) নিজেদের মতো করে তাদের সিএসআর পালন করে। এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন আছে। সিএসআরের দায়িত্ব পালনের জন্য ধুমধামে বার্ষিক পুরস্কার দেওয়া হয়, খাওয়া-দাওয়া হয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে বৃত্তি দেওয়া হয়।’

মুহিত তার চিঠিতে আরও বলেছেন, ‘এই বিষয়ে (সিএসআর) সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বাস্তবে নেই। কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যাবে সে সম্বন্ধেও নির্দিষ্ট ধারণা নেই। বোধহয় শুধু কী ধরনের সিএসআর পালন কর রেয়াতি বা অব্যাহতি পাওয়া যায় সেটিই নির্দিষ্ট আছে।’

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআর নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নীতিমালা রয়েছে। ওই নীতিমালার আলোকেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও মানবিক আবেদন বিভিন্ন খাতে সিএসআরের অর্থ দিয়ে থাকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় শিক্ষা খাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০১৪ সালে দেশের ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ৫১০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এই ব্যয় ব্যাংকগুলোর কর-পরবর্তী মুনাফার প্রায় ৯ শতাংশ। এই বিপুল অর্থের ৩০ শতাংশ শিক্ষা আর ২৭ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে। ওই বছর দেশের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৬৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সিএসআর খাতে।

ব্যাংক খাতের বাইরেও দেশের বড় বড় শিল্প ও বাণিজ্য গ্রুপ বা বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি সিএসআর করে থাকেন। কিন্তু ওইসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কোন খাতে বা কাকে কী পরিমাণ সিএসআর বাবদ অর্থ দিচ্ছেন এবং ওই অর্থ কোথায় কী কাজে ব্যয় হচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান সরকার বা কোনো পক্ষেরই কাছে নেই। কিছু হিসাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে জমা হয় সিএসআর খাতে ব্যয় করা অর্থের ওপর কর রেয়াত পাওয়ার জন্য। বর্তমান আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিএসআর খাতে ব্যয় করা অর্থে ১০ শতাংশ কর রেয়াত রয়েছে।

সিএসআরের অর্থের অপব্যবহারের আশঙ্কা খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সিএসআর গাইডলাইন তৈরি করেছে সেখানেও এসব অর্থ যাতে জঙ্গি বা সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়ক এমন কোনো কাজে ব্যবহার না হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু সমাজ থেকেই লাভ করে সেহেতু সমাজে কিছু দেওয়া তাদের দায়িত্ব। এদিকে সরকার যখন সিএসআরের বিপরীতে কর রেয়াত দেবে সেক্ষেত্রে সিএসআরের অর্থ কোথায় খরচ হবে, কোথায় হবে না, তা নিয়ে কথা বলার অধিকারও সরকারের থাকে। আবার কিছু বিষয় আছে যেগুলোর সিএসআরের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকা দরকার। যেমন, কোথাও একটা কয়লার খনি উত্তোলিত হলো বা শিল্প স্থাপিত হলো, তাহলে ওই এলাকার জনসাধারণের প্রতি ওই কোম্পানির সিএসআর করার দায়িত্ব চলে আসে। এজন্য সিএসআর নীতিমালা করার সময় এসব বিষয় মনে রাখতে হবে।

যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থমন্ত্রী পরামর্শ চেয়েছেন সেগুলো হচ্ছে: সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস, বেসরকারি গবেষণা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই), ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি), ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি)।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.