আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৪ অগাস্ট ২০১৬, বুধবার |

kidarkar

অনির্দিষ্টকালের জন্য সামিট পাওয়ারের লেনদেন স্থগিত

summit-power-limited_সামিটশেয়ারবাজার রিপোর্ট: একিভূতের পর মূলধন নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সামিট পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল রাতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এ সিদ্ধান্ত জানায়।

জানা গেছে, একটি কোম্পানি তালিকাচ্যুতির বিষয়ে যথাযথ বিধি অনুসরণে ব্যর্থতার দায়ে তদন্তপূর্বক স্টক এক্সচেঞ্জের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

জানা গেছে, গতকাল লেনদেন শেষ হওয়ার পর উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও সামিট পাওয়ারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে বিএসইসি। বিএসইসির সম্মেলন কক্ষে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সামিট পাওয়ারের লেনদেন স্থগিতের বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো পক্ষ থেকেই এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার বিপরীতে সামিট পাওয়ার লিমিটেডের মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন নেয়নি কোম্পানি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা না হলেও একীভূতকরণ কার্যকর ধরে এসপিপিসিএলকে তালিকাচ্যুত করে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। এজন্য সামিট পাওয়ারের লেনদেন স্থগিত করার পাশাপাশি তদন্তপূর্বক স্টক এক্সচেঞ্জের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

জানা গেছে, গতকাল সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে (এসপিপিসিএল) তালিকাচ্যুত করে সামিট পাওয়ারের লেনদেন অব্যাহত রাখে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। একীভূতকরণের পর পরিশোধিত মূলধন নিয়ে সমস্যা থাকার বিষয়টি গতকাল লেনদেন শেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরে পড়লে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে জরুরি তলব করে এ সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। বৈঠকের পর কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি ডিএসই সাংবাদিক ও বিনিয়োগকারীদের অবহিত করবে।

ডিএসইর কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য না করলেও রাতে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিতের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সামিট পাওয়ারের লেনদেন বন্ধ থাকবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাামিট পাওয়ারের কোম্পানি সেক্রেটারি স্বপন কুমার পাল শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, শেয়ারবাজারে সামিটের লেনদেন স্থগিতের বিষয়ে আমাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। বিএসইসি বা স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের কিছু জানালে পরবর্তী সিদ্ধান্ত বা বিস্তারিত বলা যাবে। মূলধন জটিলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা একীভূতকরণের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অফিসে জমা দিয়েছি। এর অনুমতি পেলে মূলধন বাড়ানো হবে।

একীভূত হওয়া কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের নামে সামিট পাওয়ারের শেয়ার ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে একীভূতকরণ, পরবর্তীতে সামিট পাওয়ারের মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন এবং তার পরে তাদের নামে সামিট পাওয়ারের শেয়ার ইস্যুর প্রক্রিয়া চলমান। আমাদের জানামতে, এক্ষেত্রে কোনো বিধি ভঙ্গ হচ্ছে না। তবে আইনি দিকগুলোয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বা মত থাকতে পারে।

পূর্বঘোষণা অনুসারে, ২৩ আগস্ট রেকর্ড ডেটের পর গতকাল থেকে সামিট পাওয়ারের সঙ্গে গ্রুপের আরো তিন বিদ্যুত্ কোম্পানির একীভূতকরণ স্কিম কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে এসপিপিসিএল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ছিল। কোম্পানিটিকে গতকাল তালিকাচ্যুত করেছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। এদিকে এখনো আনুপাতিক হারে সামিট পাওয়ারের শেয়ার পাননি এসপিপিসিএলের শেয়ারহোল্ডাররা।

লেনদেন স্থগিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, একীভূতকরণের পর বুধবার সামিট পাওয়ারের প্রথম লেনদেন হয়। এদিন লেনদেনের সময় কোম্পানিটির মূলধনগত কিছু জটিলতা আমাদের নজরে আসে। পরে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে আগামী কার্যদিবস (রোববার) থেকে কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নোটিস না দেয়া পর্যন্ত তাদের লেনদেন বন্ধ থাকবে। এর বাইরে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে সামিট পাওয়ারের পরিশোধিত মূলধন দেখানো হচ্ছে ১ হাজার ৬৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাত্ ডিএসই একীভূতকরণ-পরবর্তী মূলধন গণনা করেছে। অন্যদিকে সিএসইর ওয়েবসাইটে একীভূতকরণ-পূর্ব ৮২৬ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন প্রদর্শন করা হচ্ছে। এদিকে ডিএসইতে অনুমোদিত মূলধন দেখানো হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ কোটি ও সিএসইতে ১ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২২৮ ও ২২৯ ধারা অনুসারে উচ্চ আদালতে তিন কোম্পানিকে সামিট পাওয়ারের সঙ্গে একীভূতকরণের অনুমোদন চাওয়া হলে শর্তসাপেক্ষে গত ১৪ জুলাই সামিট গ্রুপের তিন কোম্পানির একীভূতকরণের চূড়ান্ত অনুমতি দেন হাইকোর্ট বিভাগ। শর্তের আলোকে নিরপেক্ষ ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট জমা দেয় কোম্পানি।

স্কিম অনুসারে, নিজ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১ দশমিক ৩০৯টি শেয়ার পাবেন সামিট পূর্বাঞ্চলের শেয়ারহোল্ডাররা। সামিট উত্তরাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানির একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১.৬৬৮টি এবং সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ারের একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১.৪৭৫টি শেয়ার দেয়া হবে।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.