শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সামিট পাওয়ারের লেনদেন স্থগিতকরণের প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল কি না সেটি তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে   শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান।

এদিকে একীভূত হওয়া সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারের শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য সামিট পাওয়ারের শেয়ার বুঝিয়ে না দিয়েই কোম্পানিটিকে তালিকাচ্যুত করার ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। ২৪ আগস্ট বুধবার রাতে এ কমিটি করা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তদন্ত কমিটি করেছে কি-না, তা জানা যায়নি।

জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার বিএসইসি কার্যালয়ে টানা ছয় ঘণ্টার (বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে বৈঠকটি ছিল কমিশন সভার জন্য অনির্ধারিত। কোরাম সংকটে কমিশন সভার পরিবর্তে বিএসইসি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, একজন কমিশন সদস্য, একাধিক নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। অনির্ধারিত এ বৈঠকে কমিশন সদস্য মো. আমজাদ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। তবে দেশে থাকার পরেও বৈঠকে অংশ নেননি আরেক সদস্য অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা। অন্য এক কমিশন সদস্য আবদুল সালাম সিকদার হজ পালনে সৌদি আরবে রয়েছেন। আর বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন রয়েছেন ছুটিতে।

বৈঠক শেষে সাইফুর রহমান বলেন, সামিট পাওয়ারের পুরো বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলমকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন- বিএসইসির পরিচালক মনসুর আহমেদ, মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও উপ-পরিচালক ফখরুল ইসলাম মজুমদার। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে দাখিল করতে হবে।

এর আগে বুধবার সামিট পাওয়ারের লেনদেন বিষয়ে আরেকটি জরুরি বৈঠক করে বিএসইসি। বৈঠকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারকে তালিকাচ্যুত ও সামিট পাওয়ারকে নতুন করে লেনদেন চালুর বিষয়ে যথাযথ বিধি অনুসরণে ব্যর্থতার দায়ে তদন্তপূর্বক উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। বুধবার লেনদেন শেষে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ নির্দেশ দেয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ডিএসই’র একটি সূত্র জানায়, ডিএসই’র রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বোর্ড। চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) এ কে এম জিয়াউল হাসান খান, উপ-মহাব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

সিএসইর এমডি জানান, একীভূত হওয়া সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারের শেয়ারহোল্ডাররা তাদের প্রাপ্য শেয়ার বুঝে পেয়েছেন কি-না, তা নিশ্চিত না হয়ে কোম্পানিটিকে তালিকাচ্যুত করা উচিত হয়নি। তিনি বলেন, শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সামিট পাওয়ারের। এক্ষেত্রে তাদের কর্মপ্রক্রিয়ায় ফাঁক আছে।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান ও শাকিল রিজভীও মনে করেন, সামিট পাওয়ার ও স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।

জানা যায়, ব্যবস্থাপনা ও কর ব্যয় কমিয়ে আরও বেশি মুনাফার সুযোগ তৈরি করতে গ্রুপের অন্য তিন বিদ্যুৎ কোম্পানিকে একীভূত করেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার। সামিট গ্রুপের কোম্পানি সামিট পাওয়ারের সঙ্গে সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানি, সামিট উত্তরাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানি এবং সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার একীভূত হয়েছে। এর মধ্যে সামিট পাওয়ার ও সামিট পূর্বাঞ্চল পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত। বুধবার থেকে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে। সামিট উত্তরাঞ্চল পাওয়ার ও সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার তালিকাভুক্ত নয়।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২২৮ ও ২২৯ ধারা অনুসারে উচ্চ আদালতে তিন কোম্পানিকে সামিট পাওয়ারের সঙ্গে একীভূতকরণের অনুমোদন চাওয়া হলে শর্তসাপেক্ষে গত ১৪ জুলাই সামিট গ্রুপের তিন কোম্পানির একীভূতকরণের চূড়ান্ত অনুমতি দেন হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদের বেঞ্চ। এর আগে বিধি মোতাবেক বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিরও অনুমোদন নেয় সামিট পাওয়ার।

সামিট পূর্বাঞ্চলের একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১.৩০৯টি শেয়ার পাবেন শেয়ারহোল্ডাররা। সামিট উত্তরাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানির একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১.৬৬৮টি এবং সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ারের একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১.৪৭৫টি শেয়ার দেওয়া হয়।

এর আগে তিন কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হওয়া সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারের শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনায় ডিএসই ও সিএসই বুধবার রাতে জরুরি বৈঠক করে সামিট পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে। আগামী রোববার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ ছাড়া পুরো বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য শনিবার উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনা পর্ষদের পৃথক সভা ডেকেছে।

এদিকে, সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করে একীভূতকরণের পর সামিট পাওয়ারের বুধবারের লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তা বাতিল করার বিষয়ও আলোচনা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। বুধবার ডিএসইতে পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৫টি শেয়ার কেনাবেচা হয় এক কোটি ৮১ লাখ টাকায়। আর সিএসইতে ১৪ হাজার ২৮৫টি শেয়ার কেনাবেচা হয়।

এ বিষয়ে সামিট পাওয়ারের জনসংযোগ কর্মকর্তা শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারের শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার দেওয়ার প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বিএসইসির অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে স্বল্পতম সময়ে শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ