কিংবদন্তি লেখক গফুর হালি আর নেই
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুর স্রষ্টা, গীতিকার, মরমি গায়ক চট্টগ্রামের অহংকার আবদুল গফুর হালী আর নেই। পাঞ্জাবিওয়ালা…, সোনা বন্ধু তুই আমারে…, মনের ও বাগানে ফুটিল … ও শ্যাম রেঈুন ন যাইও রে…, দেখে যারে মাইজভাণ্ডারে… ইত্যাদি সহ আরও অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা গফুর হালী বুধবার ভোর ৫.৩০টার দিকে নগরীর সার্সন রোডে মাউন্ট হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি এই ধরাধামে ৮৮ বছর কাটিয়েছেন। ১৯২৮ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়া থানার রশিদাবাদ গ্রামে জন্ম নেন হালী।
তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির পিএইচপি হাইটসে মরহুমের মরদেহ রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জোহর নামাজের পর পাক ভাণ্ডার শরীফের জমিনের ধুলি কনা মেখে জেন ওনাকে দরবারে পাকের শাহী জমিনের মাটিতে রেখে জানাজা দেওয়া হয় সেই ওসিয়ত মোতাবেক মাইজভাণ্ডার পাক দরবার শরিফে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
বাদ মাগরিব জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা ও শুক্রবার বাদ জুমা পটিয়ার রশিদাবাদ ইউনিয়নের শোভনদণ্ডীতে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, যার গান গেয়ে আজ অনেকেই সুরের জগতে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব, শেফালি ঘোষ, সঞ্জিত আচার্য, কল্যাণী ঘোষ, আবদুল মান্নান, সেলিম নিজামি, হাবিব, শিরিন, পান্নাসহ আরও অসংখ্য শিল্পী রয়েছেন। আবদুল গফুর হালীকে নিয়ে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হানস হারডার প্রতিনিয়ত গবেষণাকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। উনার অনেক মাইজভাণ্ডারী গান জার্মানির ভাষায় অনুদিত করে সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর (Folklore) বিভাগও তার কাজের উপর গবেষণা চালাচ্ছে।
জার্মানির হালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতবর্ষ বিষয়ক দর্শনশাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক ড. হানস হারডার (বর্তমানে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) ১৯৮৯ সালের দিকে বাংলাদেশ এসেছিলেন । তিনি চট্টগ্রামের মাইজভাণ্ডারসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন । পরে শিল্পী কল্যাণী ঘোষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে । তাঁর জীবন ও গান নিয়ে ২০০৪-এ ডার গফুর স্পীস (পাগলা গফুর বলে) নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেন । এতে হালীর ৭৬টি গান অন্তর্ভুক্ত হয় । এগুলোকে “আবদুল গফুর হালী রচিত পূর্ব বাংলার মরমি গান” বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক ড. হানস হারডার । তিনি লেখেন, “আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি বা উপাধি না থাকলেও নিজের চেষ্টায় তিনি অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হতে সক্ষম হয়েছেন । তিনি নিজেকে শুধু বাংলা সাহিত্যের দিকে সরাসরি ধাবিত করেননি । তাঁর সাহিত্য ও দর্শন সাধনাকে চট্টগ্রামের একটি ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলেন আর তা সেই উৎসবে ক্রমাগত যাতায়াতের মাধ্যমে । প্রায় প্রতিদিনই তিনি মাইজভাণ্ডারী গান রচনা করেন । ভালোবাসার এক অলৌকিক শিল্প তাকে টালমাটাল করে তোলে । ঐশ্বরিক এক শক্তি তাঁর নিজস্ব দর্শনকে পরিচালিত করে তাকে” ।
যার রহানী ফয়েজ ও রহমতে ধন্য হয়ে আবদুল গফুর হালী সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তার পীর ও মুর্শিদ, আধ্যাত্মিক গুরু মাইজভাণ্ডারী তরিকার অন্যতম রূপকার ও প্রচারক, সুফিরাজ, হযরত গাউসে জামান শাহসূফী আলহাজ্জ মাওলানা ছৈয়দ শফিউল বশর আল-হাসানী আল-মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা