তিন মেয়াদে বিনিয়োগ শিক্ষা দেবে বিএসইসি: গেজেট প্রকাশ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশের বিনিয়োগকারীদের সুনির্দিষ্ট ভাবে শিক্ষিত করে তুলতে বিনিয়োগ শিক্ষার উন্নয়নে এক গেজেট প্রকাশ করেছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ২৬ ডিসেম্বর (সোমবার) এ গেজেট প্রকাশ করে। যা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিনিয়োগ শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) বিধিমালা ২০১৬ নামে পরিচিত হবে।
গেজেটে বলা হয়েছে, বিনিয়োগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কমিশন যেসব কর্মসূচি গহণ করতে পারবে তা হল: স্বল্পমেয়াদি (এক বছর বা তার নিচে), মধ্যমেয়াদি (এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত) এবং দীর্ঘমেয়াদি (তিন বছরের বেশি)।
বিনিয়োগ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে যেসব মাধ্যমে কার্যক্রম গ্রহন করা যাবে তা হল:
উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বস্তবায়নের লক্ষ্যে একাডেমিক এবং বিভাগ সমন্বিতভাবে, দূরশিক্ষণ ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এ লক্ষে একাডেমি এবং বিভাগ সমন্বিত ভাবে বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, মূল্যায়ন ও পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অনলাইন ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠদান এবং পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন ও গ্রহনে একাডেমি এবং বিভাগ সমন্বিতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এ লক্ষে একাডেমি এবং বিভাগ সমন্বিতভাবে ইলেকট্রনিক ও অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করবে এবং বিনিয়োগ শিক্ষাকে বিষয়বস্তু করে নাটিকা, বিজ্ঞাপন, প্রামাণ্যচিত্র, কার্টুন, কুইজ, বিতর্ক ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, ইত্যাদি আয়োজন, আয়োজনের উদ্যোগ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গহণ করবে।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একাডেমি এবং বিভাগ সমন্বিতভাবে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যায়ে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ পাঠ্যসূচিতে বিনিয়োগ শিক্ষা পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্তকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্ত কমিশন আদে দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ে এক বা একাধিক কমিটি গঠন করবে।
কমিশনের আদেশের বলে নির্ধারিত অন্যান্য মাধ্যমে শিক্ষা পরিচালিত হবে। যা একাডেমি এবং বিভাগ সমন্বিতভাবে কমিশনের আদে অনুযায়ী রোড শো, সেমিনার, ওয়ার্কসপ ইত্যাদি অন্যান্য মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারের ব্যবস্থা করবে।
এছাড়া গেজেটে সংশ্লিষ্ট বিষয়ক কর্মসূচি পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে- এর লক্ষে কমিশন এক বা একাধিক কর্মসূচি পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবে, এক বা একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে, নিংন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিভাগ এর কার্যক্রম তদারকি করবে এবং প্রয়োজনে আদেশের মাধ্যমে এর কর্মপরিধি ও শর্তাবলী নির্ধারণ করবে।
প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে- বিনিয়োগ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের নিমিত্ত একাডেমি সময় সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কোন প্রশিক্ষক কমিশন বা একাডেমির অনুমোদনক্রমে স্বীয় উদ্যোদে এবং কমিশন বা একাডেমির পক্ষ থেকে কর্মসূচি পরিচালনা করতে পারবে। কমিশনের আদেশ দ্বারা প্রশিক্ষকের যোগ্যতা নির্ধারিত হবে। প্রশিক্ষকদেরকে কমিশন বা একাডেমি বা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সনদপ্রাপ্ত বা অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হতে হবে।
এর কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে- এই বিধিমালার উদ্দেশ্য পূরণে বিভিন্ন সময় আদেশ দ্বারা বিনিয়োগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পদ্ধতি ও কার্যাবলী নির্ধারণ করবে।
এর অর্থসংস্থানের বিষয়ে বলা হয়েছে- কমিশন এ কার্যক্রম দেশব্যাপী প্রসারের লক্ষে প্রারম্ভিক অর্থসংস্থান করবে। কমিশনের বাজেটে এর জন্য একটি খাত সৃষ্টি করা হবে এবং এ খাতে নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ এই বিধিমালা মোতাবেক কমিশন কর্তৃক ব্যয় করা হবে।
একই সাথে বিনিয়োগ শিক্ষা তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। যা অনুমোদিত তফসিলি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যেখানে এর কর্তৃপক্ষ, এক্সচেঞ্জ, ডিপজিটরি, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি, ইস্যুয়ার, এবং অর্থ ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, বা কোন বৈদেশিক সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান বা কোন প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা খাত বা অন্যকোন খাত হইতে প্রাপ্ত অর্থ জমা হবে।
এ তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য কমিশনের আদেশ দ্বারা ‘তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠিত হবে এবং এই কমিটি কর্তৃক মনোনীত ন্যূনতম দুইজন সদস্যের স্বাক্ষরে এর ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হবে। কমিশনের অনুমোদিত পদ্ধতিতে এ তহবিলের কার্যক্রম পরিচালনা এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হবে। তহবিল থেকে এই বিধিমালার আওতায় ব্যয় করার লক্ষে বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন এবং অর্থ অবমুক্তকরণ কমিশন কর্তৃক আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হবে।
তহবিলটির হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা বিষয়ে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট কমিটি এর হিসাব রক্ষণ করবে ও হিসাব বিবরণী নিরীক্ষা করবে। কমিশনের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ এ তহবিলের অর্ধ-বার্ষিক হিসাব বিবরণী নিরীক্ষা করবে। এ নিরীক্ষা প্রতি অর্ধ-বর্ষ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। বার্ষিক হিসাব বিবরণী একটি স্বীকৃত নিরীক্ষা ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষা করিতে হবে। এ নিরীক্ষা কর্যক্রম প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে কমিশনে দাখিল করতে হবে।
বিনিয়োগ শিক্ষা তহবিল বিলুপ্তিকরণের বিষয়ে বলা হয়েছে- বিনিয়োগ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে বিভাগের তত্ত্বাবধানে কমিশন কর্তৃক ‘বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)’ নামে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর কমিশনের আদেশের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে ও পদ্ধতিতে বিনিয়োগ শিক্ষা তহবিল বিলুপ্ত হবে।
এ তহবিল একাডেমির যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করার উদ্দেশ্যে গঠিতব্য ‘বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট তহবিল’ আরেকটি তহবিলের সাথে একিভূত হবে।
একাডেমি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বলা হয়েছে- বিনিয়োগ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে বিভাগের তত্ত্বাবধানে কমিশন কর্তৃক ‘বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএফ) নামে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। একাডেমি সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে কার্যক্রম গহণ করবে এবং বিনিয়োগ ও সিকিউরিটিজ মার্কেট সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা, পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স এবং কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য কোর্স পরিচালনা ও সনদ প্রদান করতে পারবে। কমিশনের অনুমোদনক্রমে একাডেমি সকল কার্যক্রম বিনা ফি’তে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফি’সহ কোর্স পরিচালনা করতে পারবে।
একাডেমির বোর্ড অব গভর্নরস গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে- কমিশন আদেশ দ্বারা অনধিন ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একাডেমির বোর্ড অব গভর্নরস গঠন করবে। কমিশন প্রয়োজনবোধে এই বোর্ড পুনর্গঠন করতে পারবে।
বোর্ডের সভা ও সম্মানী বিষয়ে বলা হয়েছে- বোর্ড উহার চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে ও স্থানে বছরে কমপক্ষে তিনটি সভা করবে। বোর্ডের চেয়ারম্যান কমপক্ষে ৭ দিনের নোটিশ প্রদান করে সভা আহবান করবেন। সভায় কোরাম পূরণের জন্য কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতি থাকতে হবে। চেয়ারম্যান সকল সভায় সভাপতিত্ব করবেন এবং তার অনুপস্থিতিতে উপস্থিতদের নির্বাচিত কোন সদস্য সভাপতিত্ব করবেন। বোর্ডের সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকবে।
একাডেমির নির্বাহী নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে- একাডেমির প্রধাণ এবং উপ-প্রধাণ নির্বাহী হইবেন যথাক্রমে মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক। কমিশন থেকে একজন নির্বাহী পরিচালক ও একজন পরিচালককে বিএসইসি চাকুরী বিধমালা ২০১৪ এর সংশ্লিষ্ট শর্ত পালন সাপেক্ষে যথাক্রমে মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদে পদায়ন বা নিয়োগ করা হবে।
একাডেমির কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে- বোর্ডের অনুমোদনক্রমে একাডেমির প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ করা যাবে।
একাডেমির নিজস্ব তহবিলের বিষয়ে বলা হয়েছে- একাডেমীর যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করার জন্য ‘বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে এবং উক্ত তহবিলটি বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত তফসিলি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
একাডেমির অর্থবছর ও বাজেট সম্পর্কে বলা হয়েছে- কোন পঞ্জিকা বছরের ১ জুলাই থেকে পরবর্তী পঞ্জিকা বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত একাডেমির অর্থবছর গণনা করা হবে। এর বাৎসরিক বাজেট একাডেমির বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হবে।
এর হিসাব রক্ষন ও নিরিক্ষার প্রতিবেদনের বিষয়ে বলা হয়েছে- একাডেমি যথাযথ ভাবে তার হিসাবরক্ষণ করবে এবং বার্ষিক হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করবে। বার্ষিক হিসাব বিবরণী একটি স্বীকৃত নিরীক্ষা ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষা করতে হবে। একাডেমি তার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে এবং বোর্ডের অনুমোদনের মাধ্যমে তা কামিশনে দাখিল করবে।
একই সাথে বিনিয়োগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে: প্রত্যেক এক্সচেঞ্জ, ডিপজিটরি, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি, অন্যান্য আত্ম নিয়ামক সংস্থা, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান এবং ইস্যুয়ার কোম্পানি, বিনিয়োগ শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে পৃথক বিভাগ, ওয়াকিং গ্রুপ ইত্যাদি গঠনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/রু