কীভাবে পরিবর্তন হলো ইসলামী ব্যাংক, জানতে চান অর্থমন্ত্রী: চিঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের না জানিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কীভাবে পরিবর্তন হলো—বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে তা জানতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সচিবালয়ে ২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা গুরুতর বিষয়।’
ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি)প্রেসিডেন্ট বন্দর এম এইচ হাজ্জারের দেওয়া চিঠির জেরে অর্থমন্ত্রী এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ইসলামী ব্যাংকে আইডিবির পাশাপাশি সৌদি আরব এবং কুয়েতেরও শেয়ার আছে। গত ৫ জানুয়ারি ব্যাংকটির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় যে পরিবর্তন হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রীকে গত ২৪ জানুয়ারি চিঠি দেন আইডিবির প্রেসিডেন্ট বন্দর এম এইচ হাজ্জার।
আইডিবি ওই চিঠির অনুলিপি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনকেও।
চিঠিতে আইডিবির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের ২০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের শেয়ারের পরিমাণ ৫২ শতাংশ। পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, স্বতন্ত্র পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি শেয়ারধারীরা মনে করেন, তাঁদের হাত থেকে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও স্বতন্ত্র পরিচালকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকে উচ্চপর্যায়ের এই সাম্প্রতিক পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের না জানিয়ে এবং তাঁদের অমতে করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে ব্যাংকটি যাতে আগের মতোই আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন বজায় রেখে চলতে পারে, চিঠিতে সে ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি বলে প্রশ্ন তোলা হয়।
গত ৫ জানুয়ারি পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসনে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় আরমাডা স্পিনিং মিলের পক্ষে পরিচালক হিসেবে আরাস্তু খান যোগ দেন। এরপরই চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ার ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের পদত্যাগপত্র উপস্থাপন করেন। এরপর তিনিও চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরই মুস্তাফা আনোয়ার সভা থেকে বের হয়ে যান। এরপরই কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আরাস্তু খানকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আবদুল হামিদ মিঞাকে নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব হিসেবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব জাহিদুল কুদ্দুস মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যাংকটির অন্যান্য শীর্ষ পদেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়।
কীভাবে এটা ঘটল—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি অন্য রকম ভেবেছিলাম। কারণ, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) আগের প্রেসিডেন্ট আহমেদ মোহাম্মদ আলী ইসলামী ব্যাংকের কিছু সমস্যার কথা আমাকে জানিয়েছিলেন। আমি মনে করেছিলাম ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে বর্তমান আইডিবিরও একই রকমের মনোভাব রয়েছে। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট দেখছি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় বেশির ভাগ শেয়ারহোল্ডার অংশ নিতে পারেননি—বিষয়টি কীভাবে ঘটল তা জানতে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটা প্রতিবেদন চেয়েছি। গভর্নরের বিষয়টা জানা উচিত।
ইসলামী ব্যাংকের নেতৃত্ব পরিবর্তন সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা এক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী ব্যাংকের যে পরিবর্তন হয়েছে, এটা স্বাভাবিক। চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন, পর্ষদ তা গ্রহণ করেছে। নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এমডি অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেছেন। নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকও তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
শুভঙ্কর সাহা বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে এমডিদের সুরক্ষা দিতে একটা নীতিমালা করা হয়েছিল। পদত্যাগ করা এমডি যদি কোনো অভিযোগ করেন, তাহলে বিষয়টি দেখা হবে।
দেশি-বিদেশি যৌথ উদ্যোগে দেশে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ৭০ শতাংশ হলেও বর্তমানে তা ৫২ শতাংশে নেমে এসেছে।
গত বছর শেষে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক ১ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। শাখা রয়েছে ৩১৮টি। ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৬৮ হাজার কোটি ও ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।