আইপিও নিয়ে উভয় সংকটে ইস্যু ম্যানেজার
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির অনুমোদনের ক্ষেত্রে উভয় সংকটে পড়েছে ইস্যু ম্যানেজাররা। একদিকে কোম্পানিগুলোর অধিক প্রিমিয়াম দাবি, অন্যদিকে মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়। সর্বশেষে কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে না পারলে ব্যবসায় মন্দা। তারওপর নিয়মিত ইস্যু আনতে না পারলে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইনের গ্যারাকল। সব মিলিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে ইস্যু ম্যানেজাররা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সাত বছর হতে চললেও পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকাল কাটেনি। এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা প্রিমিয়ামবিহীন আইপিও বাজারে এলে ক্ষতির মাত্রা কিছুটা লাঘব করতে পারবেন। কিন্তু অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নিয়ে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেলেই বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গঠন থেকে শুরু করে, ব্যবসায়িক সাফল্য, সুনাম অর্জন ইত্যাদির মাধ্যমে একটি কোম্পানিকে পরিপূর্ণতা দান করে কর্তৃপক্ষ। এতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিতে হয়েছে। অথচ মাত্র ১০ টাকার একটি শেয়ার কিনে মালিকানার ভাগ বসিয়ে মুনাফা নেয় অন্যজন। তাই প্রতিটি ১০ টাকার শেয়ারে কোম্পানিগুলো চাহিদামতো প্রিমিয়াম নেয়ার জন্য ইস্যু ম্যানেজারের দ্বারস্ত হয়।
এদিকে চাহিদামতো প্রিমিয়ামসহ তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিপাকে পড়তে হয় ইস্যু ম্যানেজারদের। তারা বলছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নাজুক। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পোষাতে প্রিমিয়ামবিহীন কিংবা তাদের নাগালে থাকে এমন প্রিমিয়াম দিয়ে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে চায় বিএসইসি। কিন্তু কোম্পানিগুলো তাদের নির্দিষ্ট মূল্য ছাড়া বাজারে তালিকাভুক্ত হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। বর্তমান আইন অনুযায়ী প্রিমিয়াম নিতে চাইলে বুক বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে রো শো থেকে শুরু করে নানা প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হয়। কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী বাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে চাইলে বিডিংয়ে অন্যান্যদের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। সবমিলিয়ে তাদের ব্যবসার ক্ষতিও হচ্ছে বলে জানান একাধিক ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, কোম্পানিগুলোকে বাজারে আসার প্রস্তাব ইস্যু ম্যানেজাররা দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো চাহিদামতো প্রিমিয়াম না পেয়ে এক ইস্যু ম্যানেজারের পরিবর্তে আরেকটিতে যায় অথবা তালিকাভুক্তিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। ইস্যু ম্যানেজাররাই সবসময়ই ভালো কোম্পানি বাজারে আনার জন্য চেষ্টা করে থাকে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিনিয়োগকারীরা সবসময় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি নতুন কোম্পানির আইপিও কখন আসবে। ২০১০ সালের দিকে বেশকিছু কোম্পানি অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নিয়েছে। তখন হাসিমুখেই বিনিয়োগকারীরা অর্থের যোগান দিয়েছে। কারণ তখন মার্কেট ভালো ছিল। কিন্তু এখন তাদের বাঁচা-মরার লড়াই চলছে। এ সময় প্রিমিয়ামবিহীন কিংবা ফেসভ্যালুর অর্ধেক প্রিমিয়ামের আইপিও বিনিয়োগকারীদের কামনা। এতে তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে যাবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা