তিন কোম্পানির অবস্থা নিয়ে যা বললো নিরীক্ষক
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা এবং ভবিষ্যত নিয়ে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষকরা তাদের মতামত তুলে ধরেছেন।
কোম্পানি তিনটি হলো : জুট স্পিনার্স, জিল বাংলা ও সমতা লেদার।
জুট স্পিনার্স সম্পর্কে নিরীক্ষক জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। যাতে পূঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৩৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এমতাবস্থায় কোম্পানিটির ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষমতা নিয়ে নিরীক্ষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালের বাংলাদেশের শ্রম আইনের ২৩৪ (বি) ধারা পরিপালন করেনি। এছাড়া শ্রমিক ফান্ডের টাকার সুদ প্রদান করা হয়নি বলে নিরীক্ষক আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।
কোম্পানিটির ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তারপরেও কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে এ সংক্রান্ত উৎপাদন ব্যয়, প্রশাসনিক ব্যয় ইত্যাদি দেখানো হয়। এছাড়া আয়েশা কাদিরের ৩৫ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ না করেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত সুদজনিত ব্যয় আর্থিক হিসাবে দেখায় না। যাতে দায় কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে নিরীক্ষক জানিয়েছেন।
এদিকে কোম্পানির সঙ্গে সর্ম্পকিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন হলেও বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস)-২৪ অনুযায়ি, তা প্রকাশ করা হয় না। এছাড়া কোম্পানির পরিচালকদের সঙ্গে অধিকাংশ লেনদেন নগদে করায় নিরীক্ষক আপত্তি জানিয়েছেন।
জিল বাংলা নিয়ে নিরীক্ষক বলছে, দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৩০ জুন কোম্পানিটির মূলধন ঘাটতিদাড়িয়েছে ২৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকায়। যা শেয়ারপ্রতি হিসাবে ৪১৮ টাকা।
এদিকে কোম্পানিটি থেকে প্রতি মেট্রিক টন চিনি বিক্রয় করা হয় ৫৯ হাজার ৮০০ টাকা করে। কিন্তু এই ১ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনে ৮১ হাজার ১৪৯ টাকা ব্যয় হয়। যাতে প্রতি মেট্রিক টনে কোম্পানির লোকসান হয় ২১ হাজার ৩৪৯ টাকা।
কোম্পানিটির বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে পাওনা ১ লাখ ২২ হাজার টাকা আদায় নিয়ে নিরীক্ষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারপরেও এই পাওনার বিপরীতে কোন সঞ্চিতি গঠন করা হয় না বলে নিরীক্ষক জানিয়েছেন।
কোম্পানির মূলধন ঘাটিত, লোকসান ও পাওনা আদায়ের অসম্ভাব্যতা নিয়ে কোম্পানিটির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে নিরীক্ষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যদি সরকার সহায়তা না করে, তাহলে নিকট ভবিষ্যতে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সমতা লেদার কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জমি কেনার জন্য অগ্রিম না দিয়েও ১৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা প্রদান করেছে বলে দেখিয়েছেন। আর কোম্পানিটির ব্যবসা রপ্তানিমূখী হলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোন ধরনের রপ্তানি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস)-১২ অনুযায়ি, সমতা লেদারে ডেফার্ড টেক্স গণনা করা হয় না বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাসের উপর অবচয় গণনা করলেও তা হিসাব মান অনুযায়ি সংরক্ষিত আয়ে স্থানান্তর করে না। এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নতুন ক্রয়কৃত স্থায়ী সম্পদের উপরে পূর্ণ বছরের অবচয় গণনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেদিন ক্রয় করা হয়েছে, তা বিবেচনায় না নিয়ে বেশি অবচয় গণনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ