আজ: শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৩ জুন ২০১৫, শনিবার |

kidarkar

জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না: বিশ্ব ব্যাংক

Global-Economic-Prospects-Jশেয়ারবাজার ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকার আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৭ শতাংশ জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও তা ৬.৩ শতাংশ ছাড়াবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত ঋণদাতা সংস্থাটির ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ করে দেবে।

“রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে। এর ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।”

বিশ্ব ব্যাংক গোষ্ঠীর প্রধান এই প্রতিবেদনটি বছরে দুবার- জানুয়ারি ও জুনে প্রকাশিত হয়।

গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত বছরের প্রথম প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হলেও হালনাগাদ প্রতিবেদনে তা কমিয়ে ৫.৬ শতাংশ ধরা হয়েছে।

তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ হিসাবে চলতি অর্থবছরে ৬.৫১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৪ শতাংশ সংশোধন করে কমিয়ে ৫.৬ শতাংশ ধরা হয়েছে।

“অস্থিরতা প্রশমিত হলে রপ্তানি ও বিনিয়োগ চাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। বিশেষ করে সৌদি আরবে আবার অভিবাসন শুরুর পর প্রবাসী আয়ে তেজি প্রবাহে সামষ্টিক ভোগ পুষ্ট হবে।”

“অর্থনীতি বর্তমান সক্ষমতা নিয়ে এগুতে থাকলে পূর্বাভাসের মেয়াদকালের সম্ভাবনার কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে আশা করা যায়।”

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ায় বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি কমলেও প্রবাসী আয়ে তেজি প্রবাহ থাকায় অভ্যন্তরীণ চাহিদায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে ঋণদাতা সংস্থাটি।

ভাল কৃষি ফলনের প্রভাবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রবৃদ্ধি কিছুটা চাঙ্গা থাকবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও তা হবে খুব ধীর গতিতে। কারণ, ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক পরিমাণ অলস ঋণ থাকায় ঋণ প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।

এক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০.৪৭ শতাংশ।

এই খেলাপি ঋণের সিংহভাহ মন্দ বা কু ঋণ, অর্থাৎ যে ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে এরকম ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ১৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৫০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৯.৬৯ শতাংশ।

বিশ্ব ব্যাংকের হালনাগাদ এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় তা বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করবে এবং রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস করবে।

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আসবে বা কাছাকাছি পৌঁছাবে, যার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে ঋণের সুদহার নির্ধারণ সহজ হবে বলেও মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির শ্লথ গতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে অস্থিতিশীলতা, মধ্যপ্রাচ্যে নিম্ন প্রবৃদ্ধিসহ অনেকগুলো বিষয়কে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঝুঁকি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে আগের তিন বছরের ধারবাহিকতায় ২০১৫ সালকেও বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য ‘হতাশাজনক বছর’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ২.৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা ৩.৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

চলতি বছর উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪.৪ শতাংশ, যা আগামী বছর বেড়ে ৫.২ শতাংশ হতে পারে।

এ বছর উন্নত বিশ্বের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। আগামী বছর ধরা হয়েছে ২.৪ শতাংশ।

২০১৫ সালের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.১ শতাংশ এবং পরের অর্থবছরের জন্য ২০১৬-১৭ সালে তা বেড়ে ৭.৪ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলো কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে। ঋণের জন্য উচ্চ ব্যয় এবং জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের নিম্নমূল্য পরিস্থিতিই মূল চ্যালেঞ্জ।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং বলেন, মন্দার পর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হলো উন্নয়নশীল দেশগুলো। তবে তারা এখন অধিকতর কঠিন অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে আছে। নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলো যাতে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য বিশ্ব ব্যাংক সাধ্যমতো সহায়তা করবে।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মূ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.