আরমানিটোলায় দগ্ধ নবদম্পতি লাইফ সাপোর্টে
শেয়ারবাজার ডেস্ক: রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে দগ্ধ নবদম্পতি মুনা সরকার ও আশিকুজ্জামান খানকে শনিবার লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এখন করণীয় কিছু নেই। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তাদের সবারই শ্বাসনালিতে সংক্রমণ হয়েছে বেশি।’
এর আগে শুক্রবার ভোরে আরমানিটোলায় বহুতল একটি আবাসিক ভবনের নিচে রাসায়নিকের গুদাম থেকে লাগা আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন কলেজছাত্রীসহ চারজন। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৫ জন।
আরমানিটোলার আরমানিয়ান স্ট্রিটে অবস্থিত ‘হাজী মুসা ম্যানশন’ নামের আটতলা ওই ভবনের নিচতলায় রাসায়নিকের মার্কেট। সেখানে রয়েছে অন্তত ২০টি দোকান ও গুদাম। ভবনের দ্বিতীয় তলায় রাসায়নিকের গুদাম। ওপরের তলাগুলোর আবাসিক ফ্ল্যাটে লোকজনের বসবাস। ভবনটির মালিক হাজী মুসার ছেলে মোশতাক আহমেদ চিশতী ধানমন্ডি এলাকায় থাকেন। তবে সেখানে তার রাসায়নিক বিক্রির একটি দোকান ছিল। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, শুক্রবার ভোর সোয়া ৩টার দিকে ওই ভবনে আগুনের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট টানা চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে জানালার গ্রিল কেটে কাপড় বেয়ে, মই বেয়ে কয়েকশ বাসিন্দা ভবন থেকে নিচে নেমে আসেন।
এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের গুদাম থেকে লাগা আগুনে ১২৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনার পর পুরান ঢাকার বসতবাড়িগুলো থেকে রাসায়নিকের ভয়ংকর গুদাম সরানোর দাবি জোরালো হয়। তখন এসব গুদাম সরাতে তোড়জোড়ও শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিকের গুদামের আগুনে ৭১ জন প্রাণ হারান। ফের পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের অবৈধ গুদাম-দোকান উচ্ছেদে তোড়জোড় শুরু হলেও তা থেমে যায়। এর দুই বছর পর আবার সেই রাসায়নিকের গুদাম থেকে লাগা আগুন কেড়ে নিল প্রাণ।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, আরমানিটোলার ভবনটির বেশিরভাগ বাসিন্দা আতঙ্কে ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে অনেকে ফ্ল্যাটের ভেতরে আটকা পড়েন। আগুন নেভানোর পর কক্ষগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। ওই সময়ে ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে সুমাইয়া আক্তার নামে এক কলেজছাত্রীর লাশ পাওয়া যায়। দগ্ধ ও আহত অবস্থায় ওই ফ্ল্যাট থেকে সুমাইয়ার মা, বাবা, ভাই-বোন ও ভগ্নিপতিকে উদ্ধার করা হয়। নিচতলায় পাওয়া যায় ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক মো. রাসেলের লাশ। সকালে সপ্তম তলার চিলেকোঠার একটি কক্ষ থেকে অলিউল্লাহ ও কবির হোসেন নামে আরও দু’জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবনটির তিন দিক খোলা এবং একদিকে নির্মাণাধীন একটি ভবন থাকায় আটকেপড়াদের দ্রুত উদ্ধার করা গেছে। অনেকে স্থানীয়দের সহায়তায় নিরাপদে বের হতে পেরেছেন। তা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারত।